ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজন-রাকিব হত্যার রায়ের নথি হাইকোর্টে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
রাজন-রাকিব হত্যার রায়ের নথি হাইকোর্টে

ঢাকা: চাঞ্চল্যকর দুই শিশু সিলেটের সামিউল আলম রাজন ও খুলনার রাকিব হত্যা মামলার বিচারিক আদালতের রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বেলা একটার দিকে এ নথি এসেছে হাইকোর্টে।



হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালত ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগে কার্যক্রম পেশ করবেন এবং হাইকোর্ট বিভাগ উহা অনুমোদন না করলে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না’।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৮ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন আসামিপক্ষ। যদি আসামিপক্ষ আপিল করেন, তাহলে সেই আপিলসহ ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হবে হাইকোর্টে।

গত রোববার (০৮ নভেম্বর) পৃথক পৃথকভাবে আলোচিত রাজন ও রাকিব হত্যা মামলার রায় দেন সিলেট ও খুলনার আদালত।  

এর মধ্যে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত রাজন হত্যার দায়ে মূল অাসামি কামরুলসহ ৪ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। ১৩ আসামির মধ্যে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, তিনজনকে সাতবছরের কারাদণ্ড ও ২ জনকে একবছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। খালাস দেওয়া হয়েছে তিনজনকে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন, মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), তাজ উদ্দিন বাদল (২৮) ও পলাতক জাকির হোসেন পাভেল।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ময়না চৌকিদারকে অপর দু’টি ধারায় পৃথক পৃথকভাবে সাত বছর ও এক বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর মিয়ার যাবজ্জীবন প্রদান করেন আদালত।   সাত বছরের সাজা হয় কামরুলের দুই ভাই মুহিত আলম ও আলী হায়দার ওরফে আলী এবং পলাতক আসামি শামীম আহমদের। অপর দুই আসামি আয়াজ আলী ও দুলালকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।
 
অপরাধ সন্দেহজনকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান ফিরোজ মিয়া, আজমত আলী ও রুহুল আমিন।

অন্যদিকে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা রাকিব হত্যার দায়ে দুই আসামির ফাঁসির আদেশ দেন। তিন আসামির অন্যজন খালাস পেয়েছেন।

ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন হচ্ছেন- গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খান। শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

গত ০৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে রাজনকে। হত্যাকারীরা নৃশংসতম নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে দেশে-বিদেশে আলোড়ন তোলে।

অন্যদিকে গত ০৩ আগস্ট বিকেলে খুলনা নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ যানবাহনের টায়ারে হাওয়া দেওয়া (কম্প্রেসার) মেশিনের নল ১২ বছরের শিশু রাকিবের মলদ্বারে ঢুকিয়ে হাওয়া দিতে থাকেন। এতে তার পেট ফুলে ফেঁপে যায়। এক পর্যায়ে রাকিব মারা যায়।

নিষ্ঠুর ওই দুই শিশু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নিন্দার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। পৈশাচিক ঘটনা দু’টির বিচার ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন সারা দেশের মানুষ। জনদাবির মুখে হত্যা মামলা দু’টির বিচার ও রায় ঘোষিত হয়েছে অবিশ্বাস্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে।

রাকিব হত্যা ঘটনার মাত্র ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় আর ১১ বিচারিক কার্যদিবসে  মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত, যা খুলনাসহ সারা দেশের বিচার ও আইন-আদালতের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। অন্যদিকে রাজন হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার মাসের মাথায় ও বিচার শুরুর পর মাত্র ১৬ কার্যদিবসে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

একইভাবে বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার মাত্র দু’দিনের মাথায় উচ্চ আদালতে নথি পৌঁছানোর ঘটনাও ব্যতিক্রমী বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।