ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট

হকারের কবলে সড়ক, যানজটে নাকাল নগরবাসী

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
হকারের কবলে সড়ক, যানজটে নাকাল নগরবাসী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব হেঁটে যদি বিশ মিনিটে পৌঁছানো যায়- তাহলে বাসে যেতে কতোক্ষণ লাগবে? বাসটির এ দূরত্ব যেতে বড়জোর তিন মিনিট লাগবে! তবে রাজধানীর যানজটের কারণে তিন মিনিট তো দূরের কথা, ত্রিশ মিনিটেও পৌঁছানো যাবে না।
 
রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহিদুল ইসলাম।

ভেবেছিলেন, সাড়ে ছয়টার মধ্যেই ফার্মগেট পৌঁছে যাবেন। কিন্তু তার সে ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে বাস এক ঘণ্টায় পৌঁছেছে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের ল্যাবএইডের সামনে। শুধু মাহিদুলই নন, তার মতো হাজার হাজার নগরবাসী প্রতিদিনই এই সড়কে বাসে উঠে দিশা হারিয়ে ফেলেন।

নীলক্ষেত মোড় থেকে শুরু করে সায়েন্সল্যাব মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে অনেক আগেই ব্যবসা জুড়েছেন হকাররা। মেয়েদের সাজসজ্জার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বই-খাতা, টেবিল চেয়ার, ডাব, ফুসকা, শীতবস্ত্র, গার্মেন্টস সামগ্রী- সব কিছুই পাওয়া যায় এ সড়কের ফুটপাতে।

তবে শুধু ফুটপাত দখলই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে নীলক্ষেত মোড় থেকে শুরু করে হকার্স মার্কেটের আগ পর্যন্ত সড়কের অর্ধেকও দখল করে ফেলেছেন ভ্রাম্যমাণ হকারেরা। হকারদের সঙ্গে পুরো সড়ক জুড়েই অবৈধ কার পার্কিং যোগ হওয়ায় এ সড়কে যানবাহন চলাচলই দায় হয়ে পড়েছে।

এছাড়া চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত রিকশা চলাচলের সাবওয়ে দখল হওয়ায় রিকশা চলে মূল সড়কে। ফলে এ সড়কে চলাচলকারী নগরবাসীর ভোগান্তির আর শেষ থাকে না।
 
ফুটপাতের হকারদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। এখানকার উপার্জিত অর্থেই তাদের সংসার চলে। অন্য কোনো ব্যবস্থা না হলে তারা যাবেন কোথায় বলেও প্রশ্ন রাখেন। তবে ফুটপাতে ব্যবসা করেন কিভাবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ফুটপাত ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন লাইনম্যানকে ৮০ টাকা করে দিয়ে তারা ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। তবে লাইনম্যান কাদের নির্দেশে অর্থ তুলছেন এ বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দিকে ইঙ্গিত দেন ফুটপাত ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সন্ধ্যায় কথা হয় সাইন্সল্যাব মোড়ে। তিনি বলেন, ‘এ সড়কে প্রতিদিনই মারাত্মক যানজট থাকে। টিউশনিতে যেতে আসতে জান বের হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে তো কলাবাগান থেকেই হেঁটে ক্যম্পাসে চলে যাই’।
 
এ শিক্ষার্থীর কণ্ঠে ক্ষোভও ঝরলো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘সামান্য ফুটপাতই দখলমুক্ত করতে পারছেন না কেউ। সবাই শুধু মুখে মুখেই সব উদ্ধার করেন, কাজের কাজ কেউ করেন না’।

মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (নিউমার্কেট) এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নিয়মিতই সড়ক থেকে ভ্রাম্যমাণ হকারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। মাঝে মধ্যে মারপিটও করি কিন্তু তাতে কাজ হয় না। উচ্ছেদ করে যেতে না যেতেই আবার এসে বসে পড়ে’।

জনবল কম থাকায় নিয়মিত মনিটরিং করা সম্ভব হয় না বলেও উল্লেখ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, হকারদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদে ইতোমধ্যে গুলিস্তান এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব সড়কের ফুটপাত থেকেই তাদের উচ্ছেদ করা হবে।
 
** এলেমেলো যাত্রী ওঠা-নামায় সড়কে যানজট

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এইচআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।