ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফিরে দেখা ২০১৫

মানবপাচারে সমালোচিত কক্সবাজার

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
মানবপাচারে সমালোচিত কক্সবাজার

কক্সবাজার: বছরজুড়ে প্রায় প্রতিটি দিনই মানবপাচারের কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে কক্সবাজার। এ কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হয়ে ওঠেছিল প্রশ্নবিদ্ধ।



গণকবর, নিখোঁজের স্বজনদের আহাজারি, সাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা, চিহ্নিত দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান, বন্দুকযুদ্ধে দালাল নিহত, দালালের গুলিতে ও ট্রলার ডুবিতে মালয়েশিয়াগামী নিহত সহ নানা ঘটনা নিয়ে তোলপাড় ছিল সারাবছর।

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে কক্সবাজারে এক বছরেই উদ্ধার হয় দুই হাজারের বেশি যাত্রী। কক্সবাজার জেলার ৬০টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পাচার হয়েছে। আর একই সময়ে মানবপাচার আইনে ১৪০টি মামলায় ২১০ জন আসামীকে আটক করা হয়।

বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে মানবপাচারের ভয়াবহতা কেড়ে নিয়েছিল ১০টি প্রাণ। ২৯ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের খোদাইবাড়ি পয়েন্টে ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে এফভি ইদ্রিস নামে একটি ট্রলার ডুবে যায়। সন্ধ্যার সময় ডুবে যাওয়া এ ট্রলারসহ ৪২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একদিন পর কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও স্থানীয়রা যৌথ অভিযান চালিয়ে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে আরও ১জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে মহেশখালী থানা পুলিশ।

২ এপ্রিল রাতে মালয়েশিয়াগামীদের উদ্ধার করতে গিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামু উপজেলার হিমছড়ি পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে ১৭ বিজিবির সদস্য ল্যান্সনায়েক হাবিবুর রহমান নিহত হন।

ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে থাইল্যান্ডের গহীন অরণ্যে সন্ধান মিলে গণকবরের। সেসব গণকবরে সাগরপথে পাচার হওয়া মানুষদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তারপর কয়েক দফায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। বিষয়টি হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে নৌপথে পাচার হয়ে নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাদের আর্তনাদ-আকুতির খবরও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় গুরুত্বের সঙ্গে।

আর এর মধ্যেই মিয়ানমারের জলসীমা থেকে সাগরে জাহাজে ভাসমান অবস্থায় ২১মে ২০৮ জন ও ২৯মে ৭২৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করে দেশটির নৌবাহিনী। এদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত ৭৭৭ জনকে সাত দফায় বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে ৮জুন ১৫০ জন, ১৯জুন ৩৭ জন, ২২জুলাই ১৫৫ জন, ১০ আগস্ট ১৫৯ জন, ২৫ আগস্ট ১২৫ জন, ১২ অক্টোবর ১০৩ জন এবং সর্বশেষ ২ ডিসেম্বর ৪৮ জনকে ফেরত আনা হয়।

সবমিলিয়ে মানবপাচারের রুট কক্সবাজারে শুরু হয় বিশেষ অভিযান। অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ-বন্দুকযুদ্ধ এবং পাচারকারীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হন ৬জন মানবপাচারকারী।

এর মধ্যে গত ৮মে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন চিহ্নিত মানবপাচারকারী ধলু হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও জাফর আলম। ১০মে উখিয়ায় নিহত হন জাফর আলম মাঝি। ১২মে কক্সবাজারের খুরুশকুলের বেলাল হোসেন এবং ৮জুন টেকনাফে আমান উল্লাহ আনু নামের মানবপাচারকারী নিহত হন।  
এর মধ্যেই ২৯মে সেন্টমার্টিনের অদূরে সাগর থেকে ভাসমাস অবস্থায় ১১৬ জন মালয়েশিয়াগামীকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি চলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। রোড মার্চ, গোলটেবিল বৈঠক থেকে জাতীয় সংসদে আলোচনায় আসে মানবাপাচারে কক্সবাজার প্রসঙ্গ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সোচ্চার হন মানবপাচারের বিরুদ্ধে। এত কিছুর পরও বন্ধ হয়নি মানবপাচার। সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর টেকনাফ থেকে মালয়েশিয়াগামী ৪ জন যাত্রীসহ ২ দালালকে আটক করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।