ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ননী-তাহেরের মামলা

রোববার রায়ের জন্য অপেক্ষমান হতে পারে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
রোববার রায়ের জন্য অপেক্ষমান হতে পারে আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহের

ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগভিত্তিক যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ করেছেন উভয়পক্ষ। আগামী রোববার (১০ জানুয়ারি) প্রসিকিউশনের সংক্ষিপ্ত আইনি যুক্তিতর্ক শেষ হলেই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ।


 
বুধবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরের বিরতির আগে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল আইনি যুক্তিতর্কের জন্য সময়ের আবেদন জানান।
এর প্রেক্ষিতে আধা ঘন্টা সময় দিয়ে রোববার পর্যন্ত তা মুলতবি করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
 
প্রসিকিউশন তার যুক্তিতর্কে দাবি করেছেন, অভিযুক্ত আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আরজি জানানো হয়।
 
অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেননি প্রসিকিউশন। তাই এসব অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানানো হয়।  
 
অভিযোগভিত্তিক যুক্তিতর্কে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার প্রথমেই এ মামলার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ওই এলাকার (নেত্রকোনার) তালিকাভুক্ত ১০৭ জন রাজাকারের মধ্যে ১০৫ জনের বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ পাননি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা? মাত্র দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন?
 
তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা রেসিডেন্সিয়াল আঞ্জুমান কলেজ থেকে বিকম পাস করা ওবায়দুল হক তাহের আর ১৯৬৯ সালে একই কলেজ থেকে পাস করা ওবায়দুল হক তাহের এক ব্যক্তি নন বলেও দাবি করেন আসামিপক্ষের এ আইনজীবী।
 
এ সময় সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম জানতে চান, এ দাবির পক্ষে কোনো ডকুমেন্ট আসামিপক্ষ দেখিয়েছেন কি-না। জবাবে আসামিপক্ষের আইনজীবী না বোধক উত্তর দিলে এ বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে কিভাবে প্রমাণ হয় যে, এক ব্যক্তি নন?’
 
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ার-উল হক এ সময় বলেন, ‘কোনো সাক্ষী যদি কাঠগড়ায় আসামিকে শনাক্ত করেন, তাহলে আসামি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৭১ সালে বিকম পাস করলেন কি-না তাতে কি আসে যায়?’
 
এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে আব্দুস সোবহান তরফদার ৪ ও ৬নং অভিযোগে তার যুক্তিতর্ক শেষ করেন।   
 
এরপর আসামিপক্ষের এ আইনজীবী ১, ২, ৩ ও ৫ নং অভিযোগে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
 
ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের  ২৩ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষীকে হাজির করতে পারেননি তারা।
 
গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) তাহের-ননীর বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
 
এর আগে ২ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রয়েছে ৪২ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি দখল ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে দেশান্তরিতকরণ এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
 
২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর তাহের-ননীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। তার আগে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
 
মামলাটি তদন্ত করেছেন তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর। ২০১৪ সালের ৬ জুন থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তদন্ত চালিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ৯ নভেম্বর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় প্রসিকিউশনে।
 
২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর পরই নেত্রকোনা পৌর শহর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। ১৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময় : ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
এমএইচপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।