তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পেপার আর পলিথিন বিছিয়ে একটু শোয়ার জায়গা করে নিতে ব্যস্ত তারা। রাত গভীর হতেই খেয়ে না খেয়ে কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, আবার কারো কাটে নির্ঘুম রাত।
রোববার (১৫ অক্টোবর) ভোর রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশ মুখে চোখে পড়ল শত শত মানুষের সারি। কেউ ঘুমিয়ে পড়েছেন। কেউ ঘুমের মধ্যে মশা তাড়াচ্ছেন আবার কেউ ঘুমানোর চেষ্টা করছেন।
ভাসমানদের মধ্যে আবার অনেকে শ্রেণী পেশার মানুষ রয়েছেন। কেউ কুলি মজুরের কাজ করেন, কেউ টোকাই আবার কেউ হকার। কিন্তু নেই তাদের নিরাপদ বাসস্থান। যেখানেই রাত হয় তারা সেখানেই গা এলিয়ে একটু বিশ্রাম করেন বা ঘুমিয়ে যান। এভাবেই চলতে থাকে দিন মাস বছর।
রেলওয়ে স্টেশনে ১২ বছরের সন্তানের মাথার কাছে বসে আছেন ৫০ বছরের বৃদ্ধা মহিলা। কথা বলে জানা যায়, এক সময় তার সহায় সম্পদ সব ছিলো। নদী ভাঙনে সবকিছু বিলিন হয়ে গেছে। এরপর ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমান কর্মব্যস্ত নগরী ঢাকায়। ছেলে কুলির কাজ করে। যে টাকা পাই, তা দিয়ে মা ও ছেলে একবেলা ডাল ভাত খান। রোজগার না হলে অনাহারে থাকতে হয়।
১৪ বছর বয়সী সায়েম কমলাপুর ও আশপাশের এলাকায় ভাঙড়ি বিক্রি ও টোকাইয়ের কাজ করে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। কিন্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠার আগেই মা অসুস্থ হয়ে যান। বাবাকে কখনো দেখিনি। ছোট বেলায় দেখলেও তা মনে নেই। এখন কাজ করে মাকে নিয়ে খাই। মাঝে মাঝে ওষুধও কিনতে হয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও পড়তে পারি না।
শুধু সায়েম কিংবা তার মা নয় প্রতিটি মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক একটি জীবন্ত আখ্যান। এমন অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কমলাপুর, হাইকোর্ট মোড়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওসমানী উদ্যানসহ পথের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে। তাদের নেই কোনো জীবনের নিশ্চয়তা। নেই নাগরিক সুযোগ সুবিধা। দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে এসব মানুষের লাইন।
কমলাপুর রেলওয়েতে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মী শামীমুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, রাত ১২টার পর প্লাটফর্মের ভেতর থেকে নির্ধারিত যাত্রী ছাড়া সবাইকে বের করে দেওয়া হয়। তখন তারা বাইরের অংশে আশ্রয় নেয়। এদের সঙ্গে অনেক যাত্রীও আছেন। যারা হয়তো ভোরের ট্রেনে রওনা দেবেন বা রাতে এসে পৌঁছেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫,২০১৭
এএম/বিএস