গানের শেষ লাইন শেষ করতেই তাকে প্রশ্ন করলেন তানজিন তন্নি: ‘এখানে যারা আসেন, সবাই কি জাতপাত ধর্ম বিসর্জন দেন?’
উত্তরে মনোযোগী হলেন সাধু। বললেন, মানুষ যতক্ষণ একে অন্যকে না জানেন, ততক্ষণ তারা এক অপরের কাছে অসীম।
নামের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা যখন একে অন্যের নাম জানতে চাই, তখনই শুরু হয় অসীমকে ক্ষুদ্রতরে ভাঙার খেলা। প্রথমে বাংলা ভাষার ৩৯টি বর্ণ দিয়ে। এরপর ধর্ম।
ইসলাম হলে প্রথমে দুটি ভাগ। সুন্নি ও শিয়া। এ দু’ভাগকে আবার ভাঙা হয় আরো দু’ভাগে। হিন্দু ধর্মেও (সনাতন ধর্ম অর্থে) চার ভাগ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। এ চার ভাগকে আবার ভাগ করা হয় ৩৬টি জাতে। এভাবেই অসীম হতে থাকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর। আমরা লালনভক্তরা অসীমকে অসীম হিসেবেই দেখার ও জানার চেষ্টা করি।
পাশে বসে থাকা মেহেদী হাসান জানতে চান লালন দর্শনে ধর্ম ও মতবাদ নিয়ে। তার উত্তরে এ সাধু বলেন, বাইরের সমাজ মানে মতবাদ। এটা মনগড়া সৃষ্টি, তবে ধর্ম এক। সমাজ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খল করে তোলার জন্যই জগতে দুটোর বসবাস। তবে আমাদের অবশ্য পরিচয় সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা না-জানাটা অজ্ঞতা, এ অজ্ঞতাই আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করে। মনে অজ্ঞতা রেখে মতবাদ বা ধর্মকে মেনে চলা সহজ কাজ নয়।
মাটির ধর্ম জীবন সৃষ্টি করা, জলের ধর্ম সিক্ত বা শীতল করা, অগ্নির ধর্ম দহন করা, বায়ুর ধর্ম সঞ্চালন করা ও শূন্যের সৃষ্টি করা। মনের ধর্ম ভবিষ্যতে ডুবে থাকা, দেহের বর্তমান। ব্যাখ্যা করে চলেন সুদাম আনন্দ ব্রহ্মচারী।
তিনি বলেন, আমরা জানার মাধ্যমে মনের প্রসারণ করি। কেননা প্রসারণেই সুখ, সংকোচনে দুঃখ। এ জানার ধরন বা উপায় উপলব্ধি করা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু গর্ভধারণ করলেই মা হন না, মায়ের পরিচয় তার মাতৃত্ব বা মমত্ববোধে।
তিনি বলেন, অন্ন ব্যতীত মানুষ ৬২ দিন বাঁচতে পারে। সূর্যের আলো ব্যতীত ৩২ দিন ও জল ছাড়া ১১ দিন। তবে অক্সিজেন ছাড়া মানুষ যেমন এক মুহূর্ত বাঁচতে পারে না, আমাদের কাছে উপলব্ধিটা ঠিক তেমন। তাইতো সাঁইজী তার উপলব্ধির সত্যগুলো তার গানের মধ্য দিয়ে সকলের কাছে উপস্থাপন করেছেন। যার সুর দ্বারা মানুষের হৃদয় ও বাণী দ্বারা তার বিবেককে জাগ্রত করা যায়।
বাংলাদেশ সময়:১৬০০ ঘণ্টা; অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম