প্রকাশ্যে জাল ও নৌকা নিয়ে নদী থেকে নদীতে দাপিয়ে বেড়াবে জেলেরা। এখন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও মাদারীপুর জেলার শিবচরের পদ্মা নদীর চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
পানির দামে বিক্রি হচ্ছে ডিমওয়ালা ইলিশ। এই ইলিশ কিনতে শিবচর, ভাঙ্গাসহ দূর-দূরান্ত থেকে পদ্মার পাড়ে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। সস্তা ইলিশ বস্তায় ভরে ঘরে এনে ফ্রিজ ভরছে সাধারণ ভোক্তারা।
দুর্গম চরে অনেকটা কষ্ট করেই যেতে হয় বিধায় অল্প-স্বল্প কিনে ফিরছে না ক্রেতারা। ১০ থেকে ১৫ কেজি করে বড় বড় ডিমওয়ালা এসব ইলিশ কিনছে মাত্র দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা করে কেজিতে। যার দু’টি ইলিশেই প্রায় দেড় কেজি ওজন হচ্ছে। এতো সস্তায় ইলিশ বিক্রির খবর পেয়ে সকাল থেকে সারাদিনই পদ্মার তীরে ভিড় থাকে সাধারণ মানুষের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের কাজীরসূরা, নারিকেলবাড়ীসহ পদ্মার পাড়ে ইলিশের জমজমাট হাট এখন। উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে সেখানে যেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। বন্দোরখোলা ইউনিয়নের রাজারচর মালের হাট দিয়ে চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মার পাড়ে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা।
চরের সড়ক পথের বেশির ভাগ পথই পায়ে হেঁটে যেতে হয়। চরজানাজাত ইউনিয়নের সিরুমিয়ার হাট, কাজীরসূরা, নারিকেল বাড়ি, কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ইলিশ শিকার ও বিক্রি চলছে। পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা অপেক্ষায় থাকে জীবন্ত ইলিশের। পদ্মা থেকে মাছ ধরে এনে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েই বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছ কিনে ফিরে আসা এক ক্রেতা বলেন, জেলেরা জাল নিয়ে যখন নদীর পাড়ে আসে, তখন জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দেখা যায়। নদীর পাড়ে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকায় অস্থায়ী চায়ের দোকানও গড়ে উঠেছে।
কায়েস ইসলাম। স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থী। পদ্মার পাড়ে ইলিশের হাটের খবর পেয়ে তিনি গিয়েছিলেন নিজের চোখে দেখতে। শিবচরের পাঁচ্চর স্ট্যান্ড থেকে সড়ক পথে মাদবরেরচর ইউনিয়ন দিয়ে চরজানাজাত যান তিনি। প্রায় তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করে পদ্মার তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
তিনি বলেন, চরের রাস্তা দিয়ে পদ্মার পার পর্যন্ত যাওয়ার পথে অসংখ্য মানুষকে ব্যাগ, বস্তা বোঝাই করে মাছ নিয়ে ফিরতে দেখেছি। মাছ নিয়ে ক্রেতাদের ঘরে ফেরার স্রোত দেখলেই পথ চেনা যায়, কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না।
তিনি আরো বলেন, পদ্মার পাড়ে এই ইলিশ মাছকে কেন্দ্র করে যেন হাট বসেছে। মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে চরের দুর্গম এলাকার এই পদ্মার পার। আগে এই এলাকার নদীতে এতো মাছ ধরা পড়েনি বলে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এদিকে, ইলিশ ধরা বন্ধে শিবচর উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা কয়েকদিন চোখে পড়েছে। এ পর্যন্ত অভিযানে প্রায় অর্ধশত জেলের সাজা ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও থেমে নেই মাছ শিকার।
প্রকাশ্যে বিক্রি এবং দূরের হাট বাজারে পাঠাতে না পেরে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা কেজি দরে প্রায় এক কেজি ওজনের একেকটি ইলিশ বিক্রি করছে কিছু অসাধু জেলে। আর সস্তায় পেয়ে অনেকদিন ফ্রিজে রেখে খাওয়ার জন্য মাছ কিনতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে পদ্মার পাড়ে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান আহমেদ বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধে রাতে পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করে আসছে প্রশাসন। দুর্গম এলাকায় ইলিশ ধরার খবর পেয়েছি। আমরা এসব এলাকায়ও দ্রুত অভিযান চালাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
এসআই