‘‘কোমড়ে ব্যথার’’ কারণে রানা ভ্রমণ করতে পারবেন না। তাই তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি বলে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে।
টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিল বুধবার।
অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী মনিরুল ইসলাম খান জানান, রাষ্ট্রপক্ষ বুধবার সাক্ষী দেয়ার জন্য মামলার বাদী নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ, ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুনকে আদালতে হাজির করে। কারাগারে আটক আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, মো. সমির এবং জামিনে থাকা আসামি মাসুদুর রহমান, ফরিদ ও নুরুকেও আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কারাগার থেকে একটি চিঠি আদালতে পৌঁছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে জানানো হয়, মামলার প্রধান আসামি এমপি রানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি কোমড়ের ব্যথায় আক্রান্ত। তার শারীরিক অবস্থা ভ্রমণ উপযুক্ত নয়। তাই তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। পরে বিচারক মো. আবুল মনসুর মিয়া সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ দেন ১ নভেম্বর।
এমপি রানাকে হাজির না করাকে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার কৌশল বলে মনে করছে মামলার বাদী পক্ষ। তাদের মতে, এর আগে অসুস্থতার অজুহাতে রানাকে আটবার আদালতে হাজির করা হয়নি। তাই মামলাটি অভিযোগ গঠন করতেই প্রায় ১০ মাস নষ্ট হয়েছে। মামলার তারিখ এলেই রানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন সাক্ষ্যগ্রহণের সময়ও তারা একই কৌশল নিয়েছেন।
এমপি রানা যাতে প্রভাব বিস্তার করে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে না পারেন সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাদী নাহার আহমেদ।
এদিকে, সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় তারা রানা ও তার ভাইদের বিচারেরর দাবিতে মিছিল বের করে। মিছিলটি আদালত এলাকা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন- নাহার আহমেদ, পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান।
এসময় অনেকের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাতিনুজ্জামান খান, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া, ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এ মামলার আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির না করায় আটবার মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে যায়। অবশেষে ৬ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় এমপি রানা ছাড়াও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জন আসামি রয়েছেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এ হত্যায় এমপি রানা ও তার ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
এসআই