ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য, ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কালো জল আর সবুজ পাতার ফাঁক গলে ফুটে আছে লাল শাপলা। যতদূর চোখ যায় শুধু শাপলা আর শাপলা। শিশিরভেজা সকালে ও কালো জলে ভেসে থাকা লাল শাপলার সৌন্দর্য দেখে যে কারো মন ভরে যাবে।

প্রাকৃতিক শোভায় রূপসী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা, সাতলা ও আগৈলঝাড়ার বাঘদা গ্রামে।

যদিও এখন শাপলার বিলের শেষ সময় চলছে, কারণ আর অল্প দিনের মধ্যেই এ বিলের জমিতে শুরু হয়ে যাবে বোরো আবাদের প্রস্তুতি।

জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য, ছবি: বাংলানিউজতবে শাপলার বিলের বিলিয়ে দেওয়া সৌন্দর্য দেখা যাবে অক্টোবরজুড়েই। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলার এ বিল বছরের পর বছর ধরে মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছে, তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ তা আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার এ বিল দেখতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পর্যটন, ছবি: বাংলানিউজবিলে ঘুরতে আসা পর্যটক অ্যাডভোকেট মোস্তফা সাজ্জাদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‌'সকালে বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়। এখানে শাপলা পাতা ঠেলে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো আর ফটো তোলার আনন্দটা অন্য রকম। '

তিনি আরো বলেন, ‌'শাপলার বিলে শুধু শাপলা নয়, দেখা মিলছে বিলের কালচে রঙয়ের জলে ভাসা শাপলা পাতার ফাঁকে সূর্যের সোনালী আলোর ঝলকানি। দেখা মিলবে দেশীয় নানান প্রজাতির পাখির আর বিলের মানুষের গ্রামীণ জীবন-যাপন। তবে বিলের মোট আয়তন ও মাপ যেমন করোরই নির্দিষ্ট করে জানা নেই, তেমনি শাপলা ফোটার জন্মকালের বিষয়েও তথ্য নেই। '

আগৈলঝাড়ার বাঘদা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বাংলানিউজকে জানান, 'বর্ষার শুরুতে বিলে জল জমে যায়, যা থাকে ছয় মাস ধরে। যেখানে জুলাই মাস থেকেই প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফোটে। শুরুর দিকে সাদা শাপলার দেখা মিললেও এখন নেই। '

তিনি আরো বলেন, খাবার হিসেবে লাল শাপলার চল তেমন একটা না থাকায় অগণিত শাপলার মধ্য থেকে কিছু শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারেন স্থানীয়রা। আর শাপলার পাশাপাশি এ বিলের জল কালো হওয়ায় ছোট-বড় কৈ, খলিসা, টাকি, শৈল, পুঁটিসহ প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য, ছবি: বাংলানিউজতবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে আসা মানুষকে শাপলার বিলে নৌকায় ঘুরিয়েও এখন অনেকে আয় করছেন বলে জানান তিনি।

উজিরপুরের সাতলা গ্রামের স্কুলছাত্র আব্দু্ল্লাহ বলে, আর ক'দিন পরে বিলের পানিতে টান ধরবে। তখন শাপলা আর আগাছা পরিষ্কার করে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা হবে। প্রাকৃতিকভাবে উর্বর এ জমিতে অনেক ভালো ধান হয়। জলে ভাসা লাল শাপলার সৌন্দর্য, ছবি: বাংলানিউজএদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখলদারিত্ব, পানি আটকে মাছ চাষসহ বিভিন্ন কারণে শাপলার পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি চলতি বছরে আগাছাসহ নানান জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ বেড়ে গেছে বিলে।

তাদের মতে গত কয়েক বছর ধরে এ বিল দেখতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিলের চারিপাশের সড়ক ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু শাপলা নষ্ট হয়ে গেলে কে আসবে এই বিলে? তাই স্থানীয়রা শাপলার বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের নজরদারি কামনা করেছেন

বরিশাল সদর থেকে উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিলে যেতে মোটরযানযোগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।