ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হিলারির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেন ইউনূস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
হিলারির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেন ইউনূস বক্তব্য রাখছেন সজীব ওয়াজেদ জয়

ঢাকা: পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন না করতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সোমবার (অক্টোবর ২৩) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘রাজনীতিতে সত্য-মিথ্যা: পদ্মাসেতুর অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিশ্বব্যাংকের উচ্চপর্যায় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে ড. ইউনূস হিলারি ক্লিনটনকে অনুরোধ করেন বিশ্বব্যাংক যেন বাংলাদেশকে শাস্তি দেয়।

এ কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে সরে গেছে।

জয় আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথা নত করেননি। আমেরিকান অ্যাম্বেসির একজন প্রতিনিধি আমাকে হাসতে হাসতে দুইবার হুমকি দিয়েছিলেন, বলেছিলেন তোমার ট্যাক্সের অডিট হতে পারে। আমিও হাসতে হাসতে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।

‘সৎ থাকার সুবিধা হচ্ছে ভয় করতে হয় না’-যোগ করেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র।

ড. ইউনূস সম্পর্কে জয় আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। সে সময় নরওয়ের একটি টিভির সংবাদে প্রকাশিত হয় ড. ইউনূস ১০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। তখনই ইউনূস তাদের চিঠি পাঠিয়ে বলেন, আমাকে বাঁচান। তিনি টাকা পাচার করেননি এ কথা বলেননি। তখন নরওয়ে থেকে বলা হলো টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে তা ৩০ মিলিয়ন ডলার।  

ইউরোপের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নরওয়েকে উল্লেখ করেন তিনি।  

সুশীল সমাজ এবং এনজিও’র নামে দেশবিরোধীদের ওপরও ক্ষোভ ঝাড়েন বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র। তিনি বলেন, সুশীলদের মধ্যে একটি শ্রেণি আছে যারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ান। এনজিও করেন। বিদেশ থেকে টাকা আসে। সরকারের সমালোচনা না করলে বিদেশ থেকে টাকা আসবে না। তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ড. ইউনূস কখনো আমাদের দেশ নিয়ে একটি ভালো কথা বলেছেন! এই সুশীল সমাজ, ইউনূস সোসাইটি দেশের ভালো বলে না। এরা দেশকে টেনে নামাতে ব্যস্ত। আমরা কারো গোলাম নই। আমাদের বিদেশিদের সার্টিফিকেট লাগে না। নিজেদের আত্মবিশ্বাস না থাকলে বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।

তিনি বলেন, যারা মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তারা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে চায়। এই যে সুশীল সমাজ তারা মনে করে, আমরা স্মার্ট, ভালো ইংরেজি বলতে পারি। টাকা কামিয়েছি বেশ। কিন্তু ক্ষমতায় তো যেতে পারছি না। তারা ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চায়।

পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে সমালোচনা করেন সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, লুই গাব্রিয়েল মরেনো ওকাম্পোকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দুদকের অফিসে বসে দুদুকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঝগড়া করে বলেছিলেন, আবুল হোসেন এবং মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হোক। সেই ওকাম্পোর বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতির মামলা চলছে।

তিনি বলেন, আমরা বিদেশিদের বা কারো গোলাম না। বিশ্বে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। বিদেশিরা যা বলবে তাই সত্য। আমরা যা বলব তা মিথ্যা, কেন?

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, পদ্মাসেতু প্রমাণ করে আমরাই পারি। বিদেশিদের সাহায্য ছাড়াও আমরা পারি।

অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্পে বড় বাধা থাকে ভূমি অধিগ্রহণ। সেটা সৈয়দ আবুল হোসেনই অনেকটা এগিয়ে রেখেছিলেন।

পদ্মাসেতুর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক নিম্নমানের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা ফিরিয়ে দেয়। সেখান থেকেই ষড়যন্ত্রের শুরু।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ঘটনাগুলো থেকেই আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।

মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, পদ্মাসেতুকে ঘিরে মানুষের যে অভিজ্ঞতা তা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র, ষড়যন্ত্র, সুশাসন, দুর্নীতির মতো বিষয়গুলোকে বিচার করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭/আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা
এমএন/আরআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।