ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়েকে ডাক্তার বানানোই পিঠা বিক্রেতা মিনা’র ইচ্ছা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৭
মেয়েকে ডাক্তার বানানোই পিঠা বিক্রেতা মিনা’র ইচ্ছা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেত্রকোনা: ‘কাটুন (কার্টুন) মিনা’র আলাদিনের চেরাগ আছিন। জাদুর ওই চেরাগ গইস্সা (ঘষে) দৈত্যের সাহায্যে সে তার বালা ইচ্চাডি (ভালো ইচ্ছেগুলো) পূরণ করতো। কিন্তু আমারতো জাদুর চেরাগ আর দৈত্য কোনোডাই নাই।’ রাজপথের পিঠা বিক্রেতা জীবন সংগ্রামী মিনা আক্তারকে (২৫) পরিচিত এক রিক্সাচালক ‘কার্টুন মিনা’ সম্বোধন করতেই মিনা এসব কথা বলছিলেন।

রাত প্রায় ২ টা। চারপাশ জুড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ।

নিস্তব্ধ শহরে অবিক্রিত কিছু পিঠা নিয়ে অন্ধকারে কুপির আলো জ্বেলে শীতে জবুথবু করে বসে ছিলেন মিনা। তাকে ঘিরে পিঠা খেতে আসা কয়েকজন রিক্সাচালকও বসে ছিলেন। এসময় আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে মিনা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই আমি কার্টুন মিনা না। আমি বাস্তবিক মিনা। আমার স্বামী সন্তান সংসার সবই আছে। তবে কার্টুন মিনা’র মতো আমার তিনটি ইচ্ছা নাই। আমার একটাই ইচ্ছা। ’

ইচ্ছাটি কি জানতে চাইলে আশা নিয়ে মিনা বলেন, সাবিকুন্নাহার (০৯), মিথিলা আক্তার (০৫) ও ঈসমাইল হোসেন (০৩) নামে আমার তিনটি সন্তান। বড় মেয়েটি শহরের একটি প্রাইভেট স্কুলে ক্লাস ফোর-এ ও দ্বিতীয় মেয়ে ক্লাস প্লে’তে পড়ে। বড় মেয়ে সাবিকুন্নাহারকে আমি পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাবো এটাই আমার একমাত্র ইচ্ছা। তবে বাকি দুই সন্তানকেও যতদূর সম্ভব পড়াবো আমি।

মিনা নেত্রকোনা শহরে মোক্তারপাড়া ব্রিজের কাছে বিএডিসি মসজিদের সামনের ফুটপাতে বসে প্রতিদিন দুই দফায় পিঠা বিক্রি করেন। প্রথম দফায় ভোর ৫ টায় শুরু করে বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চলে তার পিঠা বিক্রি। দ্বিতীয় দফায় বিকেল ৩ টায় শুরু করে রাত আড়াইটা বা কোনোদিন ৩টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তিনি। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমমিনা’র পিঠা বিক্রির টাকায় চলে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসার খরচ। স্বামী রাসেল মিয়া (৩৫) রিক্সাচালক। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে রাসেল তেমন রোজগার করতে পারেন না। দিনে ও রাতের বেশিটা সময়  পিঠার দোকানে মিনা’র কাজে সহযোগিতা করেন রাসেল।

মিনা নেত্রকোনা পৌরসভার কাটলী এলাকায় দশ বছর ধরে একটি ভাড়া বাসায় থেকে শহরে পিঠা বিক্রি করেন। নানা রকম ভর্তা-ভাজির সঙ্গে তার দোকানের তৈরি সুস্বাদু চিতই পিঠা ৫ টাকা, ভাঁপা পিঠা ১০ ও সেদ্ধ ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। পিঠা বিক্রির টাকায় চলে মিনা’র জীবন-সংসার। আর এই টাকা খরচ করে হয়তো তিনি মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাতে সক্ষম হবেন। এই ইচ্ছা পূরণ করতে রাতের পর রাত শীতের পিঠা নিয়ে রাজপথ পাহাড়া দেন বাস্তবিক মিনা...

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।