রাত প্রায় ২ টা। চারপাশ জুড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ।
ইচ্ছাটি কি জানতে চাইলে আশা নিয়ে মিনা বলেন, সাবিকুন্নাহার (০৯), মিথিলা আক্তার (০৫) ও ঈসমাইল হোসেন (০৩) নামে আমার তিনটি সন্তান। বড় মেয়েটি শহরের একটি প্রাইভেট স্কুলে ক্লাস ফোর-এ ও দ্বিতীয় মেয়ে ক্লাস প্লে’তে পড়ে। বড় মেয়ে সাবিকুন্নাহারকে আমি পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাবো এটাই আমার একমাত্র ইচ্ছা। তবে বাকি দুই সন্তানকেও যতদূর সম্ভব পড়াবো আমি।
মিনা নেত্রকোনা শহরে মোক্তারপাড়া ব্রিজের কাছে বিএডিসি মসজিদের সামনের ফুটপাতে বসে প্রতিদিন দুই দফায় পিঠা বিক্রি করেন। প্রথম দফায় ভোর ৫ টায় শুরু করে বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চলে তার পিঠা বিক্রি। দ্বিতীয় দফায় বিকেল ৩ টায় শুরু করে রাত আড়াইটা বা কোনোদিন ৩টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তিনি। মিনা’র পিঠা বিক্রির টাকায় চলে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসার খরচ। স্বামী রাসেল মিয়া (৩৫) রিক্সাচালক। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে রাসেল তেমন রোজগার করতে পারেন না। দিনে ও রাতের বেশিটা সময় পিঠার দোকানে মিনা’র কাজে সহযোগিতা করেন রাসেল।
মিনা নেত্রকোনা পৌরসভার কাটলী এলাকায় দশ বছর ধরে একটি ভাড়া বাসায় থেকে শহরে পিঠা বিক্রি করেন। নানা রকম ভর্তা-ভাজির সঙ্গে তার দোকানের তৈরি সুস্বাদু চিতই পিঠা ৫ টাকা, ভাঁপা পিঠা ১০ ও সেদ্ধ ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। পিঠা বিক্রির টাকায় চলে মিনা’র জীবন-সংসার। আর এই টাকা খরচ করে হয়তো তিনি মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাতে সক্ষম হবেন। এই ইচ্ছা পূরণ করতে রাতের পর রাত শীতের পিঠা নিয়ে রাজপথ পাহাড়া দেন বাস্তবিক মিনা...
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
টিএ