শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। অাব্দুর রহমান বিশ্বাস বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর বনানীর বাসভবন থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ছেলে মাহমুদ হাসান বিশ্বাসের বরাত দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
দেশে সংসদীয় শাসন-ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে সেই সংসদ আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আব্দুর রহমান বিশ্বাসের জন্ম ১৯২৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে। বরিশাল শহরেই স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি লাভের পর ১৯৫০-এর দশকে আইন পেশায় যোগদান করেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস।
পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি স্থানীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার মাধ্যমে তিনি শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখেন। সমবায় আন্দোলন ও সমাজকর্মে অবদানের জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালে তাকে ‘ভেটেরান সোশ্যাল ওয়ার্কার’ সম্মাননা দেয়।
তিনি ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের সংসদীয় সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২২তম অধিবেশনে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তার আনুগত্য তৎকালীন সরকারের প্রতি থাকলেও স্থানীয়ভাবেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস।
তিনি ১৯৭৪ এবং ১৯৭৬ সালে দু’বার বরিশাল বার সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯-৮০ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় পাটমন্ত্রী এবং ১৯৮১-৮২ সালে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুর রহমান বিশ্বাস ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছরের ৪ এপ্রিল তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন। তারপর ৮ অক্টোবর তিনি নির্বাচিত হন রাষ্ট্রপতি।
আব্দুর রহমান বিশ্বাসের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:
বনানী কবরস্থানে সমাহিত হবেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭/আপেডট ২১৫৩ ঘণ্টা
এএম/এএ/এইচএ/