ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাতের রাস্তায় বাড়তি ব্যয়

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
রাতের রাস্তায় বাড়তি ব্যয় ট্রাক থেকে মালামাল নামাচ্ছেন শ্রমিকরা/ ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ভাঙা রাস্তায় যায় বাড়তি সময়, তেল খরচও বেশি। এর ওপর পুলিশ-প্রশাসনের পেছনে খরচ বেড়েছে। প্রতিবাদ করলে হয়রানি। বাড়তি খরচে মালিকের পকেটে আগের থেকে ঢুকছে কম টাকা। তবুও চলেছেন রাতের রাস্তায়। মাছ বোঝাই ট্রাক নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায়।

প্রতিদিনের এসব প্রতিকূল নিয়ম মেনে শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতেও যাত্রাবাড়ীতে মাছের আড়তে ট্রাক নিয়ে এসেছেন রবিন এবং রাজিব। একসঙ্গে চারটি ট্রাক লোড করে কিশোরগঞ্জের চামড়াঘাট থেকে রাত তিনটার দিতে এসে পৌঁছেছেন।

রাত সোয়া চারটার দিকে ট্রাক অনলোড করার অপেক্ষার সময় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছিলেন দু’জন।
  
ট্রাকচালক রবিস নারায়ণগঞ্জ স্টেডিয়াম এলাকায় বাড়ি। ট্রাকভর্তি বাইম মাছ, চাপিলা মাছ, শোল মাছ এবং চিংড়ি নিয়ে এসেছেন সাড়ে তিন টন।  

আলাপচারিতায় বলছিলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। মনোহরদীর রাস্তা ভাঙা। অতিরিক্ত এক থেকে দেড় ঘণ্টা বেশি সময় লাগে। ধীরে ধীরে যেতে হয়। এজন্য তেল খরচও বেড়েছে। যাওয়ার সময় তেমন বাড়তি খরচ হয় না।  

কিশোরগঞ্জ চামড়াঘাট থেকে ট্রাকে মাছ লোড করে ঢাকায় আসার পথে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা বা বিট খরচ দিতে হয় তাদের। কোথাও কোথায় চাঁদা নিতে চেকিংয়ের নামে বসানো হয়েছে স্পিড ব্রেকার।  
ট্রাক থেকে মাল নামিয়ে আড়তে নেওয়া হচ্ছে/ ছবি: শাকিল আহমেদরবিন জানান, ভৈরবের বারিচা দেড় মাস আগে বসানো হয়েছে নতুন স্পিড ব্রেকার। সেখানে দিতে হয় ৫০ টাকা। মাধবদীতে তিন-চার দিন আগে বসনো হয়েছে আরেকটি স্পিড ব্রেকার, এখানে যায় ২০ টাকা। কাঁচপুর ব্রিজের গোড়ায় পুলিশের বিট, এই বিট পার হতে দিতে হয়েছে ১০০ টাকা। ২০০ চাইলেও দেনদরবারে অর্ধেক কমেছে।  

এছাড়াও নরসিংদীর শিবপুরে পৌরসভা বিটে ৫০ টাকা, মনোহরদী পৌরসভা বিটে ৩০ টাকা এবং ইটাখোলায় দিতে হয় আরো ৩০ টাকা।  এভাবে রাস্তার খরচ যায় প্রতিদিন দেড় হাজার টাকা।  

মাতুয়াইলের ট্রাকচালক রাজিবও এসেছেন কিশোরগঞ্জ থেকে। বলছিলেন, কাঁটাছেঁড়া রাস্তার কথা। তার ভাষায়, অনেক কষ্ট হয় রাস্তায়।  মাছ ভর্তি ট্রাক ঢাকায় নিয়ে আসার ভাড়া আট হাজার টাকা। তিন টনের ট্রাকে সাড়ে তিনটন মাছ নিয়ে এসেছেন রবিন।  ট্রাকে ৬০-৭০ লিটার তেলের জন্য চার হাজার টাকা খরচ যায়। চালক ও সহকারীর খাওয়া খরচা আরো ৬০০ টাকা।  

ঢাকায় থেকে সাড়ে দিনটায় যাত্রা শুরু করে ১৭০ কিলোমিটার পথে রাত ৯টায় পৌছেঁছেন শুক্রবার। আর রাত ১১টায় যাত্রা শুরু করে সাড়ে ৩টায় পিরে এসেছেন যাত্রাবাড়ী।  

রবিন বলছিলেন, আগে মালিক পাইতো আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আর এখন দুই হাজার বা ২১শ’ টাকা পায়। বাদ-বাকি আমাদের খরচা।  

রাস্তায় বাড়তি খরচা গেলেও তা নিয়ে প্রতিবাদ করেন না জানিয়ে রবিন বলেন, প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানি। তার থেকে টাকা দিয়ে পার হলেই বাঁচি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।