শনিবার (০৪ নভেম্বর) সকাল ৯টায় এ উৎসব উপলক্ষে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে করুণাপূর বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হয়।
চীবর দানোৎসবে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এম.পি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মীনি মে হ্লা চিংসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এসময় প্রায় ৫ শতাধিক ভিক্ষুকে চীবর, খাদ্য ও নগদ অর্থসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন সামগ্রী দান করেন অতিথিরা।
এর আগে শহরের রাজগুরু ক্যাং ও করুণাপুর বৌদ্ধ বিহারে চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনা দেন বৌদ্ধ ধাতু জাদি’র (স্বর্ণমন্দির) প্রতিষ্ঠাতা উ পঞঞ্যা জোত থেরো (উচহ্লা ভান্তে)।
এসময় তিনি কঠিন চীবর দান সম্পর্কে দায়ক দায়িকাদের উদ্দেশে ধর্মীয় বাণীতে বলেন, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধের কাছে মহাপূণ্যবতী বিশাখা চীবর দান করেছিলেন। জগতের সব রকম দানের মধ্যে কঠিন চীবর দান সর্বোত্তম। দানের দ্বারা চিত্ত বিশুদ্ধ হয় ও মোহমুক্তি ঘটে। সব্বে সত্তা সুখীতা হোনতো, জগতে সকল প্রাণী সুখী হোক ও সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্ত হোক।
এদিকে এ উৎসবকে ঘিরে শহরের ক্যাংগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় চীবর দান উৎসব উপলক্ষে চলছে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। পুরো নভেম্বর মাস জুড়ে চলবে এ উৎসব। নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে শহরের রাজগুরু ক্যাং, করুণাপুর বৌদ্ধ বিহার, রামজাদী ও রোয়াংছড়ি বাস স্টেশন বৌদ্ধ অনাথালয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কঠিন চীবর দান উৎসব। পূণ্য লাভের আশায় শত শত দায়ক দায়িকারা বৌদ্ধ ক্যাংগুলোতে বর্ষাবাস পালনকারী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর (কাপড়) দান করছে এ উৎসবে। এতে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ নর-নারী ভিক্ষুদের চীবর দানে অংশ নেন।
বৌদ্ধ ধর্মীয় শাস্ত্রমতে চীবর দান করা হলে কায়িক-বাচনিক ও মানসিক পরিশ্রম বেশি ফলদায়ক হয় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। এ জাতীয় অনুষ্ঠান সমাজে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে বলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। তাছাড়া বুদ্ধের বাণী হলো, কঠিন চীবর দানই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দান।
এ অনুষ্ঠান বান্দরবানের রাজবন বিহারকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ত্রি-চীবর তৈরির জন্য একত্রে অংশ নেয় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়। ত্রি-চীবর তৈরির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রাজমাতা। কঠোর ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনে এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্রি-চীবর তৈরির পর তা, স্থানীয় রাজা তুলে দেন রাজবন বিহারের অধ্যক্ষের হাতে।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শুরু হয় তিন মাসব্যাপী কঠোর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, ধর্মসভা, চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা, ও আকাশে ফানুস ওড়ানোর মাধ্যমে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে বর্ণাঢ্য আয়োজন। মূল অনুষ্ঠানের তিনদিন আগে থেকে শুরু হয় বিভিন্ন আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানস্থলে আগমন। বিহার-প্রাঙ্গণে বসে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন লোকজ মেলা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ০৪ নভেম্বর, ২০১৭
আরএ