রাজধানীর কোলাহল ছেড়ে ৩০০ ফুট রাস্তা হয়ে কাঞ্চন ব্রিজের আগে একটু বামে এগিয়ে শিমুলিয়া ঘাট। এ ঘাট থেকেই সপ্তাহে দু’দিন শীতলক্ষ্যার বুকে ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে ছুটে চলে বনবিবি জাহাজ।
বেসরকারি সংস্থা ঢাকা ডিনার ক্রুজের এ আয়োজনের সঙ্গী হয়ে শনিবার (০৪ নভেম্বর) দেখা মিললো রাতের শীতলক্ষ্যার শান্ত মোহনীয় রুপের।
যাত্রার সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় হলেও পর্যটকদের আসতে দেরিতে হওয়ায় শুরু হতে হতে সন্ধ্যা। শিমুলিয়া ঘাট থেকে ট্রলারেযোগে গিয়ে জাহাজে উঠতেই কানে আসে নদী নিয়ে নস্টালজিক বিখ্যাত সঙ্গীত 'ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া....'।
দো'তলা জাহাজে ভ্রমণবিলাসীদের জন্য সোফা, কেবিন, চেয়ার-টেবিল সুদৃশ্যভাবে সাজানো। সেখানে বসে ডিনার ক্রুজ পরিবেশিত স্ন্যাকসের সঙ্গে একটার পর একটা নদীকেন্দ্রিক বাংলা গান ব্যতিক্রমী অনুভূতির সঞ্চার করে।
কখনো নদী পুরোপুরি আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে, আবার কখনো আকাশে চাঁদের মায়াময় আলোর বিচ্ছুরণ। গাছ-গাছালির আড়ালে নদীর দু'ধারের বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও কল-কারখানার বাতির আলোর ঝলকানিও। সে কৃত্রিম আলোও জ্যোৎস্নার সঙ্গে মেলবন্ধন গাথার চেষ্টায় রত।
নদীর বুকে চাঁদের আলো ভেসে যাওয়া কচুরিপানার গায়ে পড়লে চিকচিক করে উঠছে পাতাগুলো। ভরা পূর্ণিমার আলোয় ছলাৎ ছলাৎ করে ওঠা শীতলক্ষ্যার ঢেউ কর্মব্যস্ত নগর জীবনে যেন প্রশান্তির পরশ।
উসখুস করছিলেন ভ্রমণ সহযাত্রীরা। কেউ শান্ত পরিবেশ ভেঙে হুল্লোড়ে মেতে উঠতে চান, আবার কারো চাওয়া- ভালো লাগার এ নীরবতা যেন কোনোভাবেই না ভাঙে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুই ধরনের ইচ্ছাই পূর্ণতা পেল। লালন গীতির পাশাপাশি স্থান করে নিলো সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ঢাকা অ্যাটাকের বহুল আলোচিত 'টিকাটুলির মোড়' গানটিও। গানের সঙ্গে চলে অনেক যাত্রীর উদ্যাম নাচও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নাজিয়া ফেরদৌস বললেন, ‘একসঙ্গে অনেকে ট্যুরে এলে এমনটি হবেই। কেউ হার্ড সং পছন্দ করেন, কেউ সফট সং। সব কিছু নিয়েই ভ্রমণটি আনন্দের। অদ্ভুত নীরব শীতলক্ষ্যায় চলতে চলতে মনে হচ্ছে, নদী যেন বেশিই শান্ত। আর এটিই দোলা দিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ে’।
ঢাকা ডিনার ক্রুজের ম্যানেজার জায়েদ খান বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীও দূষণে আক্রান্ত, তবে বুড়িগঙ্গার মতো না। শান্ত-সৌম্য নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার ময়লা-আর্বজনার আঁচড়ে মরা কান্নার ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। সরকারের উচিত শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। ডিনার ক্রুজ নদীটির সুরক্ষায় কাজ করছে।
যাত্রা দেরিতে শুরু হওয়ায় বাদ দিতে হলো ট্রিপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জামদানিপল্লী ও মোরাপাড়া জমিদারবাড়ি দেখা। তবে বারবিকিউ ও ফানুস ওড়ানো নদী ভ্রমণের আনন্দ-উচ্ছ্বাসকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলো।
প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে রাত ১১টায় আবার শিমুলিয়া ঘাটে ফেরা। চাঁদ তখন আরও বেশি মায়া ছড়িয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে মধ্য গগনে।
** ঢাকার নদী সুরক্ষা বার্তা ‘নদী ভ্রমণ উদ্যোগ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এমসি/ওএইচ/এএসআর