কিন্তু সখিনার পিছু তাড়া করতে থাকে সেই অভাব। তবু একাই জীবন কাটিয়ে দেন টানা কয়েক বছর।
তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি সখিনা বেগম। নাম লেখান নারী শ্রমিকের খাতায়। সময়ের ব্যবধানে হয়ে যান দলনেতা। বর্তমানে তার নেতৃত্বে ২০-২৫ জন নারী শ্রমিক ক্ষেতের মরিচ ও বেগুন উঠানোর কাজ করছেন কয়েক মাস ধরে।
সখিনার মতো অসংখ্য নারী শ্রমিকের হাত ধরেই ঘুরছে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা। কিন্তু সে অনুযায়ী তাদের ভাগ্যের তেমন একটা উন্নতি ঘটছে না। কারণ পুরুষের সমান কাজ করেও দিনশেষে মিলছে অর্ধেক পারিশ্রমিক।
একই ভাবে বগুড়ার ১১টি উপজেলার কৃষকরা নারী শ্রমিকদের একইহারে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন।
নারীদের অর্ধেক পারিশ্রমিক দেওয়া প্রসঙ্গে কৃষক ইউসুফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ধরেন একজন পুরুষ শ্রমিক মরিচ ক্ষেতের গাছ বাধা, সেচ দেওয়া, ওষুধ স্প্রে করা, মরিচ উঠানোসহ সব ধরনের কাজ করতে পারেন। কিন্তু একজন নারী শ্রমিকের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না। এসব বিবেচনায় বর্তমানে একজন নারী শ্রমিককে দিনশেষে ২৫০ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। আর পুরুষ শ্রমিককে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা’।
কৃষক মিজানুর রহমান, সামছুল আলম বাংলানিউজকে জানান, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকরা কাজে কিছুটা ফাঁকি দেন। কিন্তু ফাঁকির কাজটি নারী শ্রমিকরা করেন না। এছাড়া ক্ষেতের মরিচ ও বেগুন উঠানোর কাজ নারী শ্রমিকদের মত অতটা নিখুঁতভাবে পুরুষ শ্রমিকরা করতে পারেন না। এ কারণে সবজি জাতীয় বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা সর্বত্রই আগের চেয়ে বর্তমানে তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সম্পর্কে এসব কৃষকরা বলেন, ‘পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। তবে একটি সময় নারী শ্রমিকদের কাজে নিতে হলে পুরুষ শ্রমিকদের মতোই পারিশ্রমিক দিতে হবে। হয়তো সে সময়টি আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই যোগ করেন এসব কৃষকরা।
সখিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পেটে ক্ষুধা নিয়ে লজ্জার কিছুই নেই। আমি তো চুরি করছি না। কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিচ্ছি। কাজ করছি পুরুষের সমান আর পারিশ্রমিক পাচ্ছি অর্ধেক।
কারণ মহাজনরা কাজে না নিলে তো এই টাকাও ঘরে আসতো না। এতে অভাব আরও চাড়া দিয়ে উঠতো। এখন একদিকে স্বামী কাজ করছেন আরেক দিকে আমি কাজ করছি। দু’জনের মিলিত আয়ে সংসার ভালোই চলছে যোগ করেন এই নারী শ্রমিক।
সুফিয়া, লালবানু, গোলেনুর, নুরুন্নাহারসহ একাধিক নারী শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, তারা শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বসবাস করেন। আবার তাদের কেউ কেউ পাশের নন্দীগ্রাম ও শাজাহানপুর উপজেলায় বসবাস করেন। তাদের প্রত্যেকের সংসারে কমবেশি অভাব রয়েছে। অভাবের তাড়ানায় তারা দীর্ঘদিন ধরে সখিনার সঙ্গে আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন মহাজনের কাছে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পারিশ্রমিক কম হলেও আপতত এতেই সন্তুষ্ট তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
এমবিএইচ/বিএস