ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আগারগাঁওয়ে ছিল তার শেষ অবস্থান

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৭
আগারগাঁওয়ে ছিল তার শেষ অবস্থান

ঢাকা: বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এখনও তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।  

মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে বের হন তিনি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েই মুবাশ্বার হাসানের অবস্থান ছিল।

এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আগারগাঁও এলাকার আইডিবি ভবন ও বেগম রোকেয়া সরণির লায়ন্স ভবনে অবস্থান করছিলেন তিনি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে সর্বশেষ একটি কল আসে সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে। এরপর ৬টা ৪৫ মিনিটে মোবাইল ফোনটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

নিখোঁজ মুবাশ্বারের কল সিডিআর বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পেয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।  

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার বাবা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন (নম্বর – ৪৭১)।

মুবাশ্বার হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন। এক সময় সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। পরে যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন মুবাশ্বার।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুবাশ্বার হাসানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তার মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) অনুসারে তদন্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আমরা পরীক্ষা করে দেখছি’।

‘এখন পর্যন্ত তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে সকল বিষয় মাথায় রেখে নিখোঁজ মুবাশ্বারকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’।

পরিবারের দাবি, মুবাশ্বার হাসান খুব স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেন। তার কোনো শত্রু নেই।

মুবাশ্বারের বাবা মোতাহার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকালে ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে মুবাশ্বারের সঙ্গে কথা হয়। তখন সে বলেছিলো- কিছু কাজ বাকি আছে, সেগুলো শেষ করে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাসায় ফিরবে। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়’।

‘আমরা মনে করেছি, মুবাশ্বারের ফোনে চার্জ ফুরিয়ে গেছে। পরে রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি করি’।

‘মুবাশ্বারের এক সহকর্মীকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবগত করার পর মুবাশ্বারের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের প্রধান আমাকে ফোন করে সমবেদনা জানান’।

ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি ৠাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (ৠাব-৩) অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

মুবাশ্বারের চাচা মঞ্জুর হোসেন জানান, ‘শিক্ষকতার পাশাপাশি ‘সমাজে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছিলেন মুবাশ্বার। এছাড়াও পারিবারিকভাবে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়গুলো পুলিশ-ৠাবকে জানিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, একমাস আগে মুবাশ্বার হাসানের ছাত্র পবিচয় দিয়ে তার বাসায় কেউ একজন তার খোঁজ করেছিলেন। তারপর থেকে খিলগাঁওয়ের ওই বাসায় নিজেরাই বাড়তি নিরাপত্তার জন্য গেটে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করেন।

ৠাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইমরানুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, নিখোঁজ মুবাশ্বারের বাবা বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

বুধবার (০৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) অনুষ্ঠানে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘কোনো নিখোঁজই কাম্য নয়, যদি কেউ নিখোঁজ হয়ে থাকেন, তাকে খুঁজে বের করা হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭
এসজেএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।