বাংলানিউজের এই প্রতিবেদকের কাছে সিরাজগঞ্জের কিসমত বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ফিরোজা বেগম (৫৬) এভাবেই কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭টি বছর ধরে তিনি বিড়ি বানান।
** বিড়ি শিল্প ধ্বংসের চক্রান্তকারীদের শাস্তির দাবি
ফিরোজা বেগম অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, সারাদিন কাম করে যা পাই তা দিয়ে নিজে চলি ও মেয়েদেরও কিছু দেই। বিড়ি ফ্যাক্টরি বন্ধ করলে সরকার কি আমাগো অন্য কাজের ব্যবস্থা করবো? কতো অফিসার আইলো গেলো কই আমাদের তো অন্য কামের ব্যাবস্থা হইলো না। বিড়ির কাম করে ভালোই আছি বিড়ি বন্ধ হওয়ার দরকার কি।
পাশ থেকেই সনেকা বেগম ( ৬১) প্রতিবেদককে বলেন, আমরা কিচ্ছু চাই না। সাহায্যও চাই না। আমরা শুধু কাজ চাই। আমরা যাতে কর্ম কইরা খাইতে পারি। ৩০বছর ধরে তিনি বিড়ি বানান। তার তিনটা মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে। স্বামী মারা যায় ৯ বছর। তিনটা মেয়ে ও ছেলে বিয়ে করছে। আমাগো ভাত কাপড় দেয় না। বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে কোনো রকম দিন পার করছি।
বিড়ি শিল্প বন্ধ হলে কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাগোরে কাজ দিয়ে বিড়ি শিল্প বন্ধ করোন লাগবো। আমাগোরে কে কাজে নেবে, আমরা কি আর কোনো কাজ জানি। আমরা চাই না বিড়ি শিল্প বন্ধ হোক। আগে কাম চাই তারপর বিড়ি ফ্যাক্টরি বন্ধ করুক।
বিড়ি শিল্প বন্ধ করা লাগবে কেন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে রাবেয়া বেগম ( ৪৭) বলেন, তিন ছেলে ২ মেয়ে সবাই বিয়ে করেছে। কেউ ভাত কাপড় দেয় না। কই যামু বলেন। পেটে ভাত না গেলে বাঁছবো কেমনে। বিড়ি শিল্প বন্ধ করে সরকারের কি লাভ। সরকার কি সিগারেট বন্ধ করতে পারে না। মানুষ কতো নেশা করে সেগুলো বন্ধ করতে পারে না। আমাগো পেটে ক্যান সরকার লাথি মারবে।
দিনে কত মজুরি পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তামাক পাতা ভাঙি। একটা বিড়ি বানাতে অনেক তামাক পাতা লাগে সেগুলো ভাঙি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কাম করলে ১৫০ টাকা পাই। তা দিয়ে আমি বেঁচে আছি বলেন রাবেয়া।
বিড়ি শিল্প বন্ধের বিষয়ে সিরাজগঞ্জের কিসমত বিড়ি ফ্যাক্টরি ম্যানেজার উদয় শংকর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, তাদের ফ্যাক্টরিতে ৪শ’ নারী শ্রমিক কাজ করেন। এদের বেশির ভাগই বয়োজ্যেষ্ট। পরিবারে ছেলে মেয়ে থাকলেও তাদের দেখে না। এখন এই বিড়ি শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে এরা সবাই না খেয়ে মরবে। পাশাপাশি বিড়ি হচ্ছে একটি দেশীয় শিল্প। কেননা বিড়ি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয় কিন্তু সিগারেট তৈরি করা হয় মেশিনে। তাই বন্ধ করতে হলে সরকার আগে সিগারেট বন্ধ করুক বিড়ি শিল্প নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৭
এসজে/বিএস