ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দাবি “ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা” শীর্ষক এক সেমিনার। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পরিবেশদূষণ রোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বিত আইনি কাঠামো প্রণয়ণ করে তা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের  যৌথভাবে অয়োজিত “ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা” শীর্ষক এক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব খায়রুজ্জামান কামালের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির খন্দকার রিয়াজ হোসেন, এ বি কে রেজা, মোসাম্মৎ তাহমিনা আক্তার, ইমতিয়াজ রসুল, সৈয়দ মাহবুবুল আলম, সায়মা সাইদ প্রমুখ।

এ কে এম মাকসুদ তাঁর মূল প্রবন্ধে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরার পাশাপাশি সুপারিশও পেশ করেন। এসবের মধ্যে আছে, বাংলাদেশের পৌর বর্জ্য ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মানুষ ও তাদের অমানবিক জীবন, জাতীয় অর্থনীতিতে বর্জ্যজীবী, ময়লাটানা ভ্যানকর্মী, সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী ও রিসাইক্লিং কর্মীদের অবদান, পৌর ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান আইনি কাঠামো এবং পৌর ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য আইনি কাঠামোতে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী থাকা প্রয়োজন ইত্যাদি।  

সভায় জানানো হয়, ইউনাইটেড নেশনস ইউনিভার্সিটির স্টেপ ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে , ২০১২ সালে বিশ্বে ৪৫.৬ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে।  

অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ই-বর্জ্য ২০১৬ সালে সৃষ্টি হবে ৯৩.৫ মিলিয়ন টন। হয়েছেও তা-ই।

বিশ্বে এখন ৩৫৬ কোটি মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করা হচ্ছে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ৪০০ কোটি মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করা হবে।

বিটিআরসি’র তথ্য মতে বাংলাদেশে ১১.৬৫ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে যার ওজন ১১২৫ টন।

এক হিসেবে দেখা যায়, ২০১৩ সালে ঢাকাবাসীরা বছরে গড়ে মাথাপিছু ০.২৬ কিলোগ্রাম ই-বর্জ্য তৈরি করছে। আমেরিকা তার সৃষ্ট ই-বর্জের শতকরা ৮০ ভাগই দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশে ফেলে আসে বা রপ্তানি করে।

আর  অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে পুন:চক্রায়ন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে। প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের দ্রুত বিকাশ, অতি সস্তায় আকর্ষণীয় ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য ও ইন্টারনেট প্রাপ্তির সুযোগ, নুতন ধরনের পণ্য ব্যবহারের আকর্ষণে দ্রুত পুরনো ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যটি ফেলে দেবার প্রবণতার কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ই-বর্জ্য দ্রুতহারে বেড়ে চলেছে।

প্রতিবছর বিশ্বে এই ই-বর্জ্য শতকরা ৫-১০% হারে বাড়ছে এবং এই বর্জ্যরে শতকরা ৫ ভাগের বেশী পুনরুদ্ধার করা যায় না। মানুষ ও পরিবেশের জন্য বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণেই এখন আইন করে নিয়ন্ত্রিতভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কেননা, ই-বর্জ্য যে কোন সাধারণ পৌর বর্জ্য থেকে অধিক ক্ষতিকর।

সঠিক ও নিরাপদভাবে ই-বর্জ্য না ফেলা হলে তা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। কারণ ই-বর্জ্যে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ- লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ব্রমিনেটেড ফ্লেম রির্টাডেন্ট, বেরিলিয়াম, অ্যান্টিমনি, পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি), মার্কারি বা পারদ, আর্সেনিক, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) মাটি, পানি ও বাতাসের সাথে মিশে মানুষের জন্য এক বিষাক্ত পরিবেশের তৈরি করে।

বিশেষত: যারা এগুলো সংগ্রহ, নাড়াচাড়া, জমিয়ে, ভাঙ্চুর করে, এই দুষিত পদার্থগুলো তাদের স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত পরিবহন ব্যবস্থা, কিডনি ও প্রজনন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে । এছাড়া ক্যান্সার, জন্মত্রুটি ঘটায় ও প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে থাকে।

এই পদার্থগুলোর অনেকটাই কার্সিনোজেনিক ও নিউরোটক্সিক। এ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় দরিদ্র শ্রেণীর শিশু ও নারীরা।

গবেষণায় জানা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ যারা ই-বর্জ্য নাড়াচাড়ার সাথে জড়িত তারা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানে না। তাই সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা প্রণয়ন ও পৌর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চূড়ান্তকরণের দাবি জানান হয়।

এছাড়াও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-বর্জ্য ও পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত আইন ও বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগের তাগিদ দোওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
এসএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।