ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শীত নেই ইটভাটা শ্রমিকদের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
শীত নেই ইটভাটা শ্রমিকদের! প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ইটভাটায় কাজ করছেন শ্রমিক-ছবি-বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নেই কোনো যানবাহনের আওয়াজ। থেমে থেমে চলছে দু-একটি গাড়ি। কুয়াশায় আচ্ছন্ন পুরো মহাসড়ক।

ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে নাজেহাল মানিকগঞ্জসহ সারাদেশের মানুষ। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়াটা বেশ কষ্টের।

এমন শীতের মধ্যেও ভোর থেকে অনায়াসে মাটি আর পানি দিয়ে ইটভাটায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শত শত শ্রমিক।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া এলাকায় এ.এইচ.কে ইটভাটায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ভাটার স্তুপ থেকে গুলানো মাটি নিচ্ছেন বেশ কিছু শ্রমিক। সেখান থেকে ট্রলি দিয়ে আবার ইট বানানোর লাইনে মাটি নিচ্ছেন কেউ কেউ। সেখানে ইট বানিয়ে যাচ্ছেন আরও কিছু শ্রমিক। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ইটভাটা শ্রমিকদের।

প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ইটভাটায় কাজ করছেন শ্রমিকরা-ছবি-বাংলানিউজএসময় শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় ইটভাটায়। তবে শুক্রবার দুপুরে কাজ বন্ধ থাকার কারণে রাত ৩টায় কাজ শুরু হয়ে চলে সকাল ৭টা পর্যন্ত।

শীতের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বেতখালি এলাকার পলাশ সরকার (২১) বাংলানিউজকে বলেন, রাত ২টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৩টা থেকে কাজ শুরু হয়ে চলে সকাল ৭টা পর্যন্ত। কাজের সময় কোনো শীত লাগে না। কাজের ব্যস্ততায় শীত বা কুয়াশা বোঝা যায় না।

একই উপজেলার ইছাকুল গ্রামের আব্দুল মালেক (৩৫) বলেন, ভোর থেকে ইটভাটার গোলা (মাটির স্তুপ) থেকে মাটি কেটে ট্রলিতে ভরে মেশিনে দেওয়া শুরু করি। শুরুতে শরীরে শীতবস্ত্র থাকলেও পরে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে খুলে রাখি। এভাবে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। কাজ শুরু করার সময় কিছুটা শীত লাগলেও কাজ শুরুর পরে শীত পালিয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার চার কন্যা সন্তানের জনক আব্দুল বারি বলেন, সারা বছর এলাকাতে ভ্যান চালাই। কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করি। কাজের আগে ও পরে শীত অনুভব করলেও কাজের সময় কোনো শীত লাগে না। তবে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে মাঝে মাঝে কাশি হয় বলে জানান তিনি।

প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ইটভাটায় কাজ করছেন শ্রমিকরা-ছবি-বাংলানিউজএ.এইচ.কে ইটভাটার মিল সরদার আব্বাস আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি মিলে ১৮ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। ভাটা থেকে গুলানো মাটি নিয়ে ইট বানানো পর্যন্ত তাদের কাজ। এদের অনেককেই কাজের আগে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অনেককেই আবার সপ্তাহ শেষে বেতন দেওয়া হয়।

প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকার মতো বেতন আসে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের। তবে যারা ইট বানান তাদের বেতন এর চেয়ে একটু বেশি। দরিদ্রতার কারণে ইটভাটায় কাজ করেন এসব শ্রমিকেরা। সারা বছর রিকশা ভ্যান বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া এসব শ্রমিকেরা ইটভাটা থেকে আয়ও করেন বেশ ভালো। কাজেই এদের শীতে নাজেহাল হওয়া মানে পরিবার নিয়ে উপোস থাকা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার কারণে শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তবে চলতি বছরে সদর হাসপাতালে এখনও রোগীর অতিরিক্ত চাপ নেই। তবে এসব রোগ থেকে সুস্থ থাকার অন্যতম উপায় হিসেবে সচেতনতাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।