ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হজযাত্রীদের জন্য সরকারের পরামর্শ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৮
হজযাত্রীদের জন্য সরকারের পরামর্শ  হজ ফ্লাইট/ফাইল ফটো

ঢাকা: সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ পালনে সৌদি গমনেচ্ছুদের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা ও অনিয়ম ঠেকাতে এসব নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বছরে হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ও সৌদি আরব পর্বে কিছু হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।
 
মন্ত্রী বলেন, এসব অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তিনজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত হজ এজেন্সি ও অভিযোগকারী হজযাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানি গ্রহণ করে। পরে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩টি এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
 
তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো হজযাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য তুলে ধরেন ধর্মমন্ত্রী।
 
১. বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা হজ সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেনের আগে এজেন্সি প্রদেয় সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত হবেন।  www.hajj.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফরম নম্বর-১৫ পূরণ করে চুক্তি সম্পাদন করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করবেন।
 
২. সরকার অনুমোদিত হজ এজেন্সির সঙ্গে সরাসরি হজ সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেন করুন।
 
৩. বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা চুক্তি মোতাবেক প্রদেয় অর্থ সরাসরি হজ এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে অবশ্যই ব্যাংক থেকে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করবেন।
 
৪. প্রত্যেক হজযাত্রী নিবন্ধন সনদ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্লেনের টিকিট প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন।  
 
৫. মধ্যস্বত্ত্বভোগী তথাকথিত গ্রুপ লিডার/কাফেলা/দালাল/প্রতিনিধির সঙ্গে হজ সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকুন।
 
৬. তথাকথিত কোনো কাফেলা/গ্রুপ লিডার/দালাল/মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যক্তির সঙ্গে হজের লেনদেন করে প্রতারিত হলে হজযাত্রীকেই তার দায় বহন করতে হবে।
 
৭. নিবন্ধনকারী হজ এজেন্সিকে তার নিবন্ধিত সব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠানোসহ যাবতীয় দায়-দায়িত্ব সরাসরি পালন করতে হবে।
 
৮. হজের প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের সময় হজযাত্রীর নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
 
৯. হজে গমনের যাবতীয় তথ্য হজযাত্রী প্রদত্ত নম্বরে না পেলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই হটলাইনে (হটলাইন নম্বর: ০৯৬০২৬৬৬৭০৭) ফোন করুন এবং আপনার তথ্য জানুন।
 
১০. হজযাত্রীর পাসপোর্টে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটি সঠিকভাবে উল্লেখ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
 
১১. ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রচারিত ‘হজ প্যাকেজ’ ও ‘প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য জরুরি অনুসরণীয় বিষয়সমূহ’ নামক পুস্তিকা দুটি সংগ্রহ করে আপনার যাবতীয় করণীয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
 
১২. হজে যাওয়ার আগে প্রত্যেক হজযাত্রী তার পাসপোর্টের সঙ্গে মক্কা এবং মদিনায় তার জন্য ভাড়া করা বাড়ি/হোটেলের স্টিকার সংযুক্ত রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হোন।
 
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি এবং হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয়। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর আওতায় হজে যেতে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা লাগবে। যা গতবছর ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। আর প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা খরচ হবে, যা গতবছর ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৭ টাকা খরচ হবে। যা গতবছর ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৭ টাকা।
 
বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) থেকে নিবন্ধন শুরু হয়ে চলবে আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৪ জুলাই থেকে। হজ ব্যবস্থাপনা আরো স্বচ্ছ, সুন্দর এবং উন্নত করার লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগগুলোওে তুলে ধরেন মন্ত্রী।
 
১. আগের বছরগুলোতে হজযাত্রীদের তথ্য যাচাইয়ের লক্ষ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা ছিল। নতুন হজ নীতিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হয়েছে। কেননা প্রত্যেক হজযাত্রীকে পাসপোর্ট নেওয়ার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হয়েছে।
 
২. নিবন্ধনের পর কোনো হজযাত্রী প্রতিস্থাপন করা যাবে না। তবে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হজযাত্রী প্রতিস্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে।
 
৩. নির্দিষ্ট আকার ও জাতীয় পতাকাখচিত ট্রলিব্যাগ ও কিটব্যাগ হজযাত্রীরা কিনবেন মর্মে বিধান সংযোজন করা হয়েছে। যা এর আগে মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের এবং হাব বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের কিনে সরবরাহ করতো।
 
৪. হজ সংশ্লিষ্ট সবার প্রশিক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।
 
৫. উন্নত সেবাদানকারী হজ এজেন্সিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনার লক্ষ্যে মূল্যায়নের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
 
৬. সরকারি ব্যবস্থাপনার বাড়িভাড়ার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
 
৭. হজ ফ্লাইট বিপর্যয় রোধে সুষ্ঠু ফ্লাইট পরিচালনার স্বার্থে এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি/বুকিং সরাসরি সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে দেওয়া ও অনলাইনে প্রদর্শনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।