সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজকে নিজের হাতের অবস্থা দেখিয়ে ফাতেমা বেগম বলেন, মশার যন্ত্রণায় টেকা দায়। রাতে মশারি টাঙালেও মানায় না।
নাখালপাড়ার এই বাড়িতে ৪৫ ঘর মানুষের বাস। প্রতিবার ওষুধ দিতে এলে সিটি করপোরেশনের ওই কর্মীকে প্রত্যেকেই ২-২০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। বাড়ির ম্যানেজার এই টাকা তুলে ওই কর্মীকে দিলে তবেই বাড়ির ভিতরে স্প্রে করেন তিনি।
এদিকে গত কয়েকদিনে ফাতেমা বেগমের মতো পুরো রাজধানীবাসী দিশেহারা মশার উৎপাতে। সাধারণত বর্ষাকালে মশার প্রজনন মৌসুমে উৎপাত বেশি থাকে। কিন্তু এবছর শীত শেষ না হতেই মশার দাপটে দিশেহারা মানুষ।
নাখালপাড়া রেলগেটের ভাঙাড়ি শ্রমিক আব্দুল বারেক বাংলানিউজকে বলেন, এটা মশার এলাকা। রাতে মশা মনে হয় যুদ্ধ ঘোষণা করে। বিকেল থেকেই কয়েল জ্বালাতে হয়।
এদিকে নাখালপাড়া রেল লাইনের গা ঘেঁষে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে রেখেছেন এলাকাবাসী। একইসঙ্গে পাগলারমোড় এলাকায় ভাঙাড়ির দোকানে বিভিন্ন ধরনের ভাঙা জিনিসপত্র এনে স্তূপ করা হয়েছে। এছাড়া নাখালপাড়া খালের দু’ধারে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। এতে এসব এলাকা মশার প্রজনন কেন্দ্র ও আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
অপরদিকে সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিবছর বাজেটে মশা নিধনের জন্য বড় ধরনের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। তবে কোনো বছর তা খরচ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। অথচ মশাও নিধন হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মশক নিধনের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি টাকা। কিন্তু সারা বছর ধরে এই বাজেটের ১১.৯৫ কোটি ব্যয় করে সিটি করপোরেশন।
একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে বাজেট ধরা হয় ২৩ দশমিক ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু ওই বছরও পুরো টাকা ব্যয় করতে পারেনি তারা। সেবছর ব্যয় হয় মাত্র ১৬ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। পরে চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মশক নিধনে বাজেট কিছুটা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ক্ষোভ প্রকা করে গাড়ি চালক আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, খালি বাজেট বাড়লেই কি মশা মরবে? মশা মারার জন্য টাকার ব্যবহার করতে হবে। স্প্রে মেশিনে কোরোসিন ভরে ধোঁয়া ছিঁটালেই হবে না।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা টাকা নেয় এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। অভিযোগ পেলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। আর মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন এলাকায় রুটিন স্প্রে চালু হয়েছে, যা আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেট আনুমানিক ধরা হয়। আমরা পর্যাপ্ত ওষুধ, মেশিন কিনেছি, নিয়মিত ছিঁটানোও হচ্ছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে মশা কমবে না। আমরা স্প্রে করে এলাম, কিন্তু মানুষ যদি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ না করে তাহলে মশা কমবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
এসআইজে/এএ