প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তার বক্তব্য একই। ‘কিছুই জানেন না’ তিনিও।
শনিবার (৩ মার্চ) দুপুর ১২ টায় বিমানবন্দর সড়কের ‘লা মেরিডিয়ান’ হোটেলের পরে কাউলা এলাকার বিপরীত অংশে শত শত কেটে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সেখানে আরও কিছু গাছের গোড়ায় কেটে ফেলে রাখা অবস্থায়ও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মেহগনি, আকাশমনি, কড়ই, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া কেটে সাফ করে দেয়ার চিত্র দেখা গেছে। তারপর গাছ ছোট ছোট করে টুকরো করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ জায়গাটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের। সিটি করপোরেশন এখানে কোনো কাজ করতে গেলে সড়কের অনুমোদন নিয়ে নেয়ার নিয়ম।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে গাছ কাটতে বাঁধা দেয়া হয়েছে। এরপরও তারা গাছ কেটে ফেলে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সড়কের একজন প্রকৌশলীকে মামলা করতে বলাও হয়েছে। ’
সড়ক বিভাগের আরেকজন প্রকৌশলী জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এ কাজ করেছে বলে এখন কেউ স্বীকার করছেন না।
বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা, গাছ কাটতে গিয়ে গত সপ্তাহে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের বাধা পেয়ে প্রথম দফায় ফিরে আসে সিটি করপোরেশন। পরে আবার গাছ কেটে ফেলতে যায়। এবারে সওজের অজান্তেই প্রায় ৫০০ গাছ কেটে ফেলে তারা।
সরেজমিনে গিয়ে কয়েক’শ গাছ কাটার চিহ্ন দেখা গেছে। গাছ কেটে ফেলার পর সেগুলো ছোট টুকরো করে ট্রাকে তুলে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। গাছগুলো আবার নিচ্ছেন বন বিভাগে বেশ আগের টেন্ডার পাওয়া এক কাঠ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের ‘অনুরোধে’ গাছ কাটা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে ডিএফও উম্মে হাবিবা বাংলানিউজকে জানান, সিটি করপোরেশন ভেকু দিয়ে গাছ ধ্বংস করছিল। এ অবস্থায় বন বিভাগ সেখানে যায়। যেহেতু বন বিভাগের গাছগুলোর আগের একটি টেন্ডার আছে। তাই আগের ব্যক্তিই গাছগুলো টেনে নিচ্ছেন। এ জায়গাটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের। সিটি করপোরেশনেন হয়তো কোনো ড্রেন বা অন্য কিছু নির্মাণ করবে বলে এ কাজ করেছে। তবে এজন্য সড়ক বিভাগের অনুমতি দরকার। সেটা তারা হয়তো করেনি।
এর আগে আগে এ সড়ক বিভাগ বন বিভাগকে ‘সাময়িক গাছ কাটা বন্ধ’ রাখতে চিঠি দিয়েছিল জানিয়ে উম্মে হাবিবা বলেন, তখন এ সড়কে সব ধরনের গাছ কাটা বন্ধ হয়।
সরেজমিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম যে ভেকু দিয়ে গাছ উঠিয়ে উপড়ে ফেলেছে। এক সপ্তাহ আগে সওজ কতৃপক্ষ আপত্তি দিয়েছে সিটি করপোরেশনকে। এরপর সড়কের সঙ্গে কি ‘ইন্টারনাল কি কনভিয়েন্স’ হয়েছে এটা আমার জানা নেই।
সড়কের ঢাকা বিভাগে প্রকৌশলী জানান, সিটি করপোরেশন অবৈধভাবে গাছ কাটছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে এখন মামলা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম এ রাজ্জাক বলেন, আই হ্যাভ নো আইডিয়া। ওখানে কি রাস্তা হচ্ছে?
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনকে এটা জিজ্ঞেস করেন। এটা তারা জানবে। এটা তাদের বিষয়। আমি হঠাৎ করে বলতে পারবো না।
পরে আবার তিনি ফোন করে বলেন, ওখানে ইউলুপ প্রকল্প পরিচালক বন বিভাগকে গাছ কাটতে লিখে দিয়েছে। উন্নয়নের জন্য কাটার প্রয়োজন পড়তে পারে। প্রকল্প কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তিনি এও বলেন, ‘সড়ক বিভাগ বাধা দিলে সিটি করপোরেশন ওখানে গিয়ে কাজ করার কথা নয়। সিটি করপোরেশনকে উনারা (সড়ক বিভাগ) অনেক বাধা দিচ্ছেন। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের ভেতরে যত সড়ক তা সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার কথা। এ সড়ক আমরা নেবোই নেবো। এক সময় নিতেই হবে। তাদের সাথে যুদ্ধ হচ্ছে। দ্বৈত শাসন হচ্ছে। কোনো কারণে কেন কাটা হচ্ছে আমরা জানি না। আমরা বন বিভাগকে বললেও তো সড়ক বিভাগের অনুমতি লাগবে।
এদিকে যে ইউলুপ প্রকল্প চলছে তার মূল পরিকল্পনা ও ডিজাইন যিনি করেছেন তার স্থপতি তানভীর নেওয়াজ জানান, ইউলুপের জন্য কোথাও কাজ শুরু করলে তাকে জানানোর কথা। কিন্তু সেটাও তিনিও জানেন না।
বাংলাদেশ সময়:০৬৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এসএ/এসআইএস