ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হামলাকারী ফয়জুলের চলাফেরা ছিল রহস্যজনক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৮
হামলাকারী ফয়জুলের চলাফেরা ছিল রহস্যজনক মঞ্চে জাফর ইকবালের পেছনে দাঁড়ানো (লাল চিহ্নিত) ফয়জুল। পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফয়জুলের বাড়ি/ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী ফয়জুল কারো সঙ্গে মিশতো না। এলাকায় চলাফেরা ছিল সীমিত। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও দাওয়াত খেতে বা কোনো সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতো না। তার চলফেরা ছিল রহস্যজনক।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও ফয়জুলের স্বজনরা বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।  

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের উপকণ্ঠ কুমারগাঁও শেখপাড়ার আলোচিত রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুলের বাড়ির পাশেই ‘মুতালিব ও কাচা মঞ্জিল’ নামে হাফিজ আতিকুর রহমানের বাড়িটির অবস্থান।

টিনশেড বাড়িটির প্রধান ফটক খোলা থাকলেও ভেতরে সুনসান নীরবতা। বাড়ির ভেতরের বারান্দার গেট তালাবদ্ধ।  

***আরও পড়ুন: জাফর ইকবালের উপর হামলায় তদন্ত কমিটি গঠন

স্থানীয়রা জানান, রোববার সকাল থেকে বাড়িটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘরের মধ্যে তালা লাগিয়ে চাবি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় টুকেরবাজার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য গিয়াস উদ্দিনের হাতে।  
হামলাকারী ফয়জুলের বাড়ি 
এলাকার লোকজন জানান, প্রায় চার বছর আগে হাফিজ আতিকুর শেখপাড়ায় ছয় শতক জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন। একই সঙ্গে শেখপাড়ায় বাড়ি করেন তার মামা হাজি মাহবুব ও ফজলুর রহমান। তাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়।  

জনপ্রিয় লেখক, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ শেখপাড়ার বাসিন্দারা। তারা এ হামলার ঘটনার বিচার দাবি জানিয়ে বলেন, হামলার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার আগেই গা ঢাকা দেয় হামলাকারী ফয়জুলের বাড়ির লোকজন।  

গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় চার বছর আগে জায়গা কিনে বাড়ি করেন হাফিজ আতিকুর। তিনি টুকেরবাজার শাহখুররম মখলিছিয়া মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। তাকে প্রায়ই এলাকায় দেখা গেলেও ছেলে ফয়জুরকে খুব কমই দেখা যেতো। সে ছিল নিভৃতচারী। এলাকার কারো সঙ্গে তাকে মিলতে দেখা যায়নি। কখন কোন মসজিদে নামাজ পড়তো তাও চোখে পড়তো না।  

ফয়জুরের মামি রিপা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন সময় বাসায় দাওয়াত করলে পরিবারের অন্য সদস্যরা এলেও ফয়জুর আসতো না। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ফয়জুর তৃতীয়। তার বড় ভাই আবুল হাসান কুয়েত প্রবাসী। আরেক ভাই এনামুল হাসান ও দুই বোন হাফসা ও হাবিবা বেগম বাড়িতেই ছিল। ঘটনার পর থেকে তারা লাপাত্তা।  
বাড়ির বারান্দায় গেটে তালা ঝুলছে  
তিনি বলেন, ফয়জুল তিন বছর আগে মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে। এরপর সে স্থানীয় একটি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে কিছুদিন ক্লাস করে। মাদরাসায় তার যাতায়াত অনিয়মিত ছিল। এক পর্যায়ে সে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। তবে সে কোনো জঙ্গি সংগঠন বা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা তা জানা নেই।  

ফয়জুর সিলেটের জিন্দাবাজারে রাজা ম্যানশনের মঈন কম্পিউটারের দোকানে ফটোস্ট্যাট অপারেটরের কাজ করতো। সেখান থেকেও দু’সপ্তাহ আগে চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর বেকার ছিল। সে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফিরতো বলেও জানান রিপা।  

রোববার (৪ মার্চ) দুপুরে রিপা বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী ফজলুর রহমান (হামলাকারীর মামা) নির্দোষ। ফয়জুরের বাবা-মাকে না পেয়ে পুলিশ আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য তাকে আটক করা হয়েছে।  

স্থানীয় টুকেরবাজার ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, হামলাকারীর মামা ফজলুকে গ্রেফতারের পর তার ঘরে তালা লাগিয়ে বাড়িটি নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।  

শনিবার (৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের একটি উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে লেখক, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের হামলা করে ফয়জুল হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।