সোমবার (০৫ মার্চ) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকে শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।
বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তারা দ্বি-পক্ষীয় সহযোগিতার সব বিষয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছেন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
‘দু’দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরো পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে দুই দেশই একমত হয়েছে। ’
বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের নিকট প্রতিবেশী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম একই রকম শান্তি ও প্রগতির প্রত্যাশী। উভয় দেশের জনগণ একই ধরনের রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের অংশীদার।
আরও পড়ুন>>
** বৈঠকে কুয়াং-হাসিনা
তিনি বলেন, ‘অসম শক্তির বিরুদ্ধে ভিয়েতনামীদের সংগ্রাম বাংলাদেশিদের প্রেরণা দিয়েছিল। ছাত্রনেতা হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ষাটের দশকের শেষের দিকে প্রতিবাদ সমাবেশে আমিও অংশ নিয়েছি, এখনও আমি তা মনে করতে পারি। যা আমার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল। ’
বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি তার এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে অনেক দূর নিয়ে যাবে। পাশাপাশি নতুন উচ্চতায় আসীন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে ঢাকায় সফররত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হয় তাদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম তিন সমঝোতা সই
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দ্বি-পক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমইইউ) সই হয়েছে।
এরমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে ২০১২ সালের ২ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক হয়েছিল, এবার তা নবায়ন করা হয়েছে।
নয়ায়ন করা স্মারকে সই করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং ভিয়েতনামের কৃষি ও পল্লি উন্নয়নমন্ত্রী নুয়েন জুয়ান সেউয়ং।
আর মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ভিয়েতনামের শিল্প ও ব্যবসা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
এতে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার কাও চুয়ক হুয়াং সই করেন।
এছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এতে সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান ও ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড্যাং থাই বিচ লিয়েন নিজ নিজ পক্ষে করেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যন্ত্রাংশ তৈরি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় আমরা আরো খুশি হয়েছি, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
এদিকে সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান সফররত ত্রান দাই কুয়াং। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
এরপর সেখান থেকে যান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে। জাদুঘরের প্রতিটি কক্ষ ও প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে রোববার (০৪ মার্চ) তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। মঙ্গলবার (০৬ মার্চ) তার ঢাকা ছাড়ার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৮/আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা
কেজেড/এমএ