এরইমধ্যে লঞ্চের ডেকোরেশন ও সাজসজ্জার কাজ শেষ করে পরীক্ষামূলক চালনাও সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে লঞ্চটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা থাকলেও আগামী ৭ মার্চ (বুধবার) চরমোনাইয়ের মাহফিলকে কেন্দ্র করে এটি যাত্রীসেবায় নামানো হচ্ছে।
সালমা শিপিং কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৩১৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্য ও ৫৯ ফুট প্রস্থের কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটিতে রয়েছে ১০২টি সিঙ্গেল, ৭০টি ডাবল কেবিন। এছাড়া ৬টি ফ্যামিলি ক্যাবিনসহ রয়েছে ১৭টি ভিআইপি কেবিন। ভিআইপি কেবিনগুলোতে রয়েছে পৃথক বারান্দা, টয়লেট, ফার্নিচার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। প্রতিটি কেবিনেই রাখা হয়েছে এলইডি টেলিভশন, বিলাসবহুল আসবাবপত্র।
প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের কেবিনগুলোর সামনের প্রশস্ত ও সুবিশাল বারান্দা বা করিডোরকেও সাজানো হয়েছে বাহারি ধরনের নকশা ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে। পাশাপাশি পুরো লঞ্চেই নান্দনিক ডিজাইন ও ডেকোরেশন করানো হয়েছে। নিচ তলার সুবিশাল ডেকে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার পাশাপাশি ৬০টির মতো বৈদ্যুতিক পাখা ও ডেকে একসঙ্গে ২৪৮ মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার পেছনের দিকেও রয়েছে ডেকের একটি অংশ। পুরো লঞ্চে যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।
যাত্রী ছাড়াও দুই শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধার লঞ্চটিতে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ (৩০ জন ধারণক্ষমতা), শিশুদের প্লে-গ্রাউন্ড, ফুডকোর্ট, খাবার হোটেল, বিনোদন স্পেস, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগ ব্যবস্থা।
লঞ্চটির নিচতলায় সংযুক্ত করা হয়েছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও দুই শয্যার হাসপাতাল সেবা। পাশাপাশি লঞ্চের তৃতীয় তলায় সুবিশাল বারান্দা, প্রশস্ত রাখা হয়েছে হাঁটার জন্য।
আধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর মতোই কয়েক স্তর বিশিষ্ট তলদেশ ছাড়াও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের জন্য লঞ্চটিতে জিপিআরএস সিস্টেম, রাডার, ইকোসাউন্ডার, ভিএইচএফ, ম্যানুয়াল ও ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সুকান স্থাপন করা হয়েছে। লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহার করবেন ওয়াকিটকি।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও আশপাশের নৌযানের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবে। তাছাড়া ঘন কুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে কীর্তনখোলা-১০।
যাত্রীদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় দৃশ্যমান ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত লাইফ বয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত আমদানি করে নির্মিত লঞ্চটিতে জাপানের তৈরি ৩ হাজার ২০০ অর্শ্বশক্তি সম্পন্ন ২টি মূল ইঞ্জিনের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সেবার জন্য দু’টি জেনারেটর ও একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
লঞ্চের ব্যবস্থাপক বেল্লাল হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ যাত্রীধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌযানটি গত শুক্রবার কীর্তনখোলা নদীতে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করেছে। ত্রুটি ছাড়াই লঞ্চটি ছুটে চলেছে সাড়ে ১১ নটিক্যাল মাইল গতিবেগে। যা বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী অন্যান্য লঞ্চের তুলনায় অনেক বেশি। আর রাতে লঞ্চের আলোকসজ্জা চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে সবার।
সালমা শিপিং কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, সালমা শিপিং কর্পোরেশনের তৃতীয় এবং সর্বাধুনিক লঞ্চটি দক্ষ মাস্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণীর শতাধিক ক্রু নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীসেবায় নামানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, কীর্তনখোলা-১০ দেশের সব যাত্রীবাহী লঞ্চের থেকে সর্বাধিক সেবা দিতে সক্ষম হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার সবদিক মাথায় রেখে লঞ্চটি নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রথমবারের মতো কোনো লঞ্চে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ব্যায়বহুল ব্রোঞ্জের সুসজ্জিত ৫টি দরজা লাগানো হয়েছে। উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থাসম্পন্ন এরকম আরো একটি দরজা লঞ্চটিতে বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৮
এমএস/জেডএস