আবার কয়েকজন মিলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের চাহিদামাফিক ঘুষ দিতে গিয়ে নিম্নমানের চাল গুদামে সরবরাহ করেছেন। ফলে মিল মালিকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে সরকার নির্ধারিত ৩৯ টাকা দরে গুদামে চালের জন্য সদর গুদামে ১টি, রূপদিয়ায় ১৩টি, মণিরামপুরে ১৫টি, কেশবপুরে ২৪টি, নওয়াপাড়ায় ৯টি, ঝিকরগাছায় ৯টি, চৌগাছায় ৩টি এবং নাভারণ ও বাগআঁচড়া গুদামে ১০টি মিলসহ জেলার ৮৬ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হন।
প্রতিটি মিলের চুক্তিপত্র প্রস্তুতে স্ট্যাম্প ও রেভিনিউ বাবদ ৩শ’ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে এই অফিসের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা আদায় করেছেন।
জেলার একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারিভাবে আমন চাল সংগ্রহের জন্য যশোর জেলায় ২ হাজার ১৭৮ দশমিক ৬৬০ মেট্রিক টন বরাদ্দ করা হয়। এতে ৮৬ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রত্যেক উপজেলায় কিছু মিলার, গুদামের অসৎ কর্মচারী ও দালাল নিয়োগ করে ঘুষের টাকা নির্ধারণ করেন। প্রথমদিকে, প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৫৫ পয়সা হারে অগ্রিম ঘুষ নেন।
তবে প্রথম দফার পুনঃবরাদ্দের ৩শ’ মট্রিক টন চাল নিয়ম অনুযায়ী জেলার সব মিলারের মধ্যে বন্টন করা হয়নি। এই চাল কেশবপুর, চৌগাছা ও রূপদিয়ার হাতেগোনা কয়েক মিলারের কাছ থেকে প্রতি কেজিতে ২ টাকা হারে ঘুষ নিয়ে বরাদ্দ দিয়েছেন।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় পুনঃবরাদ্দের ৩ হাজার ৮১৪ দশমিক ৩৪০ মেট্রিক টন চাল প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৫৫ পয়সা হারে অগ্রিম ঘুষ নিয়ে ইচ্ছামাফিক বরাদ্দ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে আমন চাল সংগ্রহে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ঘুষ বাণিজ্য করেছেন কোটি টাকার উপরে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মিলাররা।
ভুক্তভোগী মিল মালিকদের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড বাংলানিউজের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
তবে হয়রানি এড়াতে মিলাররা নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অগ্রিম ঘুষ নেন। এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আমরা খুবই কম দেখেছি। ’
মণিরামপুরের বিজয়রামপুর রাইস মিলের মালিক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘অন্যদের মতো তিনিও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৫৫ পয়সা হারে অগ্রিম ঘুষের টাকা দিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে ঘুষের টাকা ডিসি ফুড ফেরত দিয়েছেন। ’ তবে এই উপজেলার অন্য মিলারদের সঙ্গে কথা বলে ওই তথ্যের সত্যতা মেলেনি।
মণিরামপুরের এক মিলার অভিযোগ করেন, ‘একটি বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী জগদীশ নামের এক ব্যক্তি ডিসি ফুডের খুবই আস্থাভাজন। উপজেলার কয়েকজন মিলার, খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও জগদীশ মিলে ঘুষের টাকা আদায় করেন।
এদিকে, গত বছরগুলোতে বরাদ্দের তালিকা উন্মুক্ত থাকলেও চলতি আমন সংগ্রহে রয়েছে গোপনীয়তা। মিল ওয়ারি বরাদ্দের কাগজপত্র অতি গোপনীয়তায় রক্ষা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেও তথ্য মেলেনি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অফিস সহকারীরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্যারের নির্দেশ ছাড়া কোনভাবেই তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়, আপনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। ’
খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, সাইফুল ইসলাম বর্তমানে খুলনার খালিশপুরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন। ওই টাকার যোগান দিতে তিনি নেমে পড়েছেন ঘুষ বাণিজ্যে।
ঘুষ বাণিজ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঘুষের লেনদেন করিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ০৫ মার্চ, ২০১৮
ইউজি/আরআর