অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে এই দুর্দশা রাজধানীর আসাদগেট থেকে টাউনহল পর্যন্ত রাস্তাটির। আর এজন্য স্থানীয়দের সবার অভিযোগের আঙুল রোডটিতে অবস্থিত ছয়টি স্কুলের কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৫ মার্চ) আসাদগেট থেকে টাউনহল পর্যন্ত রাস্তাটি ঘুরে দেখা যায়, ওই ছয় স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করা তাদের অভিভাবকদের প্রাইভেটকারের অবৈধ পার্কিং লটে পরিণত হয়েছে সরু রাস্তাটি। এসব প্রাইভেটকার রাস্তায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে সকাল থেকে স্কুল ছুটির সময় বেলা ২টা পর্যন্ত। কেবল যে রাস্তা দখল তাই নয়, এর পাশাপাশি ফুটপাত দখল করে চলছে মোটর সার্ভিসিং। রাস্তা ও ফুটপাত এভাবে দখল হওয়ার কারণে মোহাম্মদপুরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যান ও জনজট।
রাস্তা দখল করে পার্কিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মিন্টু তাদের কথা মানুষ শোনে না বলে দাবি করেন।
এতো দিনে কেন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করছি। আমরা ডিউটি না করলে আরও খারাপ অবস্থা হতো। ’
সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের অ্যাকশন নেওয়ার কথা থাকলেও আসাদগেট থেকে টাউনহল পর্যন্ত রাস্তাটিতে কখনোই এমন তৎপরতা দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘুরে দেখা যায়, ছয়টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য প্রায় শ’খানেক অবৈধভাবে পার্কিং করে রাস্তার অর্ধেক দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে অনেক গাড়িই সকাল থেকে দুপুর ২টায় স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে।
সেজন্য মোহাম্মদপুরের গণপরিবহনের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তাটিতে যানজট লেগেই থাকে। আর স্কুলগুলোকে কেন্দ্র করে রাস্তার ওপরই রিকশার স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে সাধারণ যাত্রীদের বাসে বসে থাকতে হয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
এ বিষয়ে রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী পাভেল রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অবৈধভাবে এ পার্কিংয়ের জন্য আমাদের যে কী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তা বোঝানো যাবে না। প্রতিদিন অফিস টাইমে এই রাস্তায় পার্কিংয়ের জন্য জ্যামে পড়তে হয়। ’
তিনি বলেন, ‘বড় বড় সরকারি অফিসারদের ছেলে-মেয়েরা এসব স্কুলে পড়ে। অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে রাখলেও তাদের গাড়িতে হাত দেওয়ার সাহস পুলিশ পায় না। ’
টাউনহলের দিকে এগোলে দেখা যায়, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে গাড়ির সার্ভিসিংয়ের ব্যবসাও চলছে রমরমা। রাস্তা ও ফুটপাতে কার কিংবা মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কাজ করে যাচ্ছে সার্ভিসিংয়ের লোকেরা।
পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট লোকদের ‘ম্যানেজ’ করে রাস্তা ও ফুটপাতকে তারা নিজেদের দোকানের অংশ বানিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সেজন্য রাস্তায় যেমন গাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে জ্যামে, তেমনি ফুটপাত দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীদেরও হাঁটার জো নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাফর শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে এই ব্যবসা চলছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনকে দেখিনি কোনো দিন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে। আর পুলিশ তো নিজেই এখানে গাড়ি সারাতে আসে। ’
স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন রাস্তা দখলমুক্ত করা দূরে থাক, টাউন হলের সামনে অবস্থিত ছোট পার্কটিকেও বাঁচাতে পারেনি। এটি এখন রিকশার গ্যারেজে পরিণত হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের কেবল এই অংশটুকুতেই রাস্তা বা ফুটপাত দখলের চিত্র দেখা যায়নি। আদাবর, শিয়া মসজিদ ও হাউজিং এলাকায়ও লেগুনা ও বাস স্ট্যান্ডের নামে রাস্তা দখলের চিত্র দেখা যায়। এছাড়া ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা তো চলছেই।
ফলে আবাসিক এলাকাটিতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। যাতে নাকাল হতে হচ্ছে লাখো মানুষকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৮
এমএসি/এইচএ/