ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অধিকার আদায়ে মুখর নারী চা শ্রমিকরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৮
 অধিকার আদায়ে মুখর নারী চা শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের নারী শ্রমিকেরা, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: সকালটা নিজের মতো করেই চোখ মেললো। ঝকঝকে রোদ তার উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে বসন্তের প্রকৃতিকে মুখর করে রেখেছে। প্রতিদিনের মতো চা শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে বেরিয়ে পড়ার তাগিদ তখন। তারা এগিয়ে চলেছেন নিজের কর্মস্থলে। তারপর সারাদিনের কর্মমুখরতার পর গোধূলির নিভে আসা আলোয় ঘরে ফেরার পালা।  

চা গাছেদের বুক জুড়ে এখন গজিয়েছে নতুন পাতা। চা গাছের সুস্বাস্থ্য ও কার্যক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে বছরে একবার চা গাছেদের উপরের ডাল ছাঁটাই (প্রুনিং) করে দেওয়া হয়।

কিছুদিন পরেই নারী চা শ্রমিকদের প্রাকৃতিক আশীর্বাদ হয়ে তাতে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি চোখ মেলে।  

ভূমি অধিকার, কর্মক্ষেত্রে মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে আজও অধিকার আদায়ে মুখর নারী চা শ্রমিকরা।  

টিপরাছড়া চা বাগানের নারী শ্রমিক সরস্বতী চাষা জানান, আমাদের বাপ-দাদা যেখানে থেকেছে এই জায়গাটি আমাদের নয়। আমাদের ভূমির উপর আমাদের কোনো অধিকার নেই। মাথা গোঁজার যদি ঠাঁই না থাকে তবে আমরা যাবো কোথায় বলেন বাবু।
    
ওই চা বাগানের শ্রমিক গীতা বুনার্জি বলেন, দৈনিক পঁচাশি টাকা হাজিরায় কি করে পেটভরে ভাত কিনে খাবো বলেন? ছয়জন আছে আমার সংসারে। আমরা দুইজন মাত্র কাজ করি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যা দাম তাতে কিছুই হয় না।  

অস্থায়ী চা শ্রমিক মিনতি কাহার বলেন, আমরা এক বছরের উপর হবে পাতা তোলার কাজ করছি। কিন্তু এখনও আমাদের স্থায়ী করেনি। মজুরি দেয় কম। তিনবেলা ভাত খাওয়ার কথা আমরা তো কল্পনাই করতে পারি না।  

শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের নারী শ্রমিকেরা, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনআরেক নারীর কণ্ঠে গভীর আক্ষেপ। ভ্রু কুঁচকে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সাপ্তাহিক হাজিরার অর্ধেক টাকাই চলে যায় সমিতির সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধে। তারপর যে টাকা থাকে তা দিয়ে কিভাবে চলাবো? দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের জালে আমাদের বন্দী করে রেখেছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রতিবাদী নারী।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরী বাংলানিউজকে বলেন, নারী চা শ্রমিকরা এখনও তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত। ভূমি অধিকার এখন আমাদের এক নম্বর সমস্যা। এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমরা পাঁচ পুরুষ ধরে এক ভিটায় বসবাস করলেও ভিটার সেই মালিকানা এখনও সুনিশ্চিত হয়নি।  

এছাড়া তিনি বলেন, আমাদের নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির জন্য আজও সংগ্রামমুখর। এখন বাংলাদেশের ‘এ’ ক্যাটাগরি চা বাগানে স্থায়ী নারী চা শ্রমিককের দৈনিক বেতন মাত্র ৮৫ টাকা। বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে এই মজুরি অসামস্যঞ্জপূর্ণ।  

নারী চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে রাজভজন বলেন, ভাড়াউড়া চা বাগান, জাগছড়া চা বাগান, কালিঘাট চা বাগান, রাজঘাট চা বাগান প্রভৃতি ফিনলের বাগানগুলো ‘অস্থায়ী’ নারী শ্রমিকদের বেতন ‘স্থায়ী’ শ্রমিকদের সমপরিমাণ (দৈনিক ৮৫/-, এ গ্রেডের চা বাগান) দিচ্ছে না। যদিও এটি দেওয়ার কথা আমাদের শ্রমচুক্তিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে সাতগাঁও চা বাগান, জেরিন চা বাগান, মাইজদিহি চা বাগান প্রভৃতি বাগানগুলো শর্তানুযায়ী ওই বেতন দিচ্ছে।  

ফিনলে টি-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, নারী শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি অন্য সুযোগও দেওয়া হয়। আবার অস্থায়ী শ্রমিকদের কর্মদক্ষতারও একটি ব্যাপার রয়েছে। তারা স্থায়ী শ্রমিকের মতো এতোটা কর্মপটু নয়। সবদিক বিবেচনা করে এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।