ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অনিয়ম আর যাত্রী সংকটে মুমূর্ষু ওয়াটার বাস

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৮
অনিয়ম আর যাত্রী সংকটে মুমূর্ষু ওয়াটার বাস যাত্রী না থাকায় অলসই পড়ে রয়েছে ওয়াটারবাস/ছবি: শাকিল

ঢাকা: প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও (০৯ মার্চ) বাবুবাজার বাদামতলী ঘাট থেকে সকাল ৯টায় ছেড়েছে ওয়াটার বাস। বাদামতলীতে যাত্রী ওঠেনি, এরপর সোয়ারি ঘাট ও খোলামুড়া ঘাটে থামলেও কোনো যাত্রী হয়নি। তারপরও যাত্রীশূন্য ওয়াটার বাস নিয়ে সকাল ১১টায় গাবতলীতে আসেন মাস্টার নুরুল ইসলাম।

নুরুলের মতে, প্রায় প্রতিদিনেই দু'বার এ রকম যাতায়ত করে তারা। প্রায় সময়েই যাত্রী শূন্য অবস্থায় অলস সময় কাটে।

 

যাত্রী সংকট, বুড়িগঙ্গার তীব্র দুর্গন্ধময় পানি, সময় মতো না ছাড়া, গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগাসহ নানান কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে আলোচিত ওয়াটার বাস সার্ভিস। ফলে রাজধানীর নৌ-পথে অনেকটা 'মুমূর্ষু অবস্থায়' চলাচল করছে নৌ পথের এ বাস সার্ভিস।

নানা সমস্যায় জর্জরিত ওয়াটার বাস সার্ভিসের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্যোগও নিচ্ছে না বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডাব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।  

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম ওয়াটার ট্যাক্সি আনে বিআইডব্লিউটিসি। কয়েক মাস পর সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এর ৬ বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালে আবার দু'টি ওয়াটার বাস নামানো হয়। ১১ মাসের মধ্যেই ফের বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মতো ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হয়। এ সময় প্রথম দিকে ওয়াটার বাসে যাত্রীর চাপ ছিলো। ফলে দিনে ১৪ বার ট্রিপ দিত। যাত্রীদের এমন চাহিদার কারণে ওয়াটার বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছিলো বলে জানা যায়।

তবে সেবার মান ধরে রাখতে না পারায় ক্রমেই যাত্রীসংখ্যা কমে যায়। যার কারণে বর্তমানে সার্ভিসটি প্রতিদিন দু’বার ট্রিপ দেয়। তাও প্রায় সময়ে যাত্রী ছাড়া নিয়ম রক্ষার খাতিরে।

যানজট এড়াতে নগরবাসী ওয়াটার বাস বেছে নেবে তার উপায় নেই। গাবতলী থেকে বাবুবাজার ঘাটে আসতে সময় লাগছে দু’ঘণ্টা। সেখানে সার্কুলার রোড হয়ে যানজট না থাকলে গাড়িতে লাগে আধা ঘণ্টা।

ওয়াটার ট্যাক্সির বিলম্ব হওয়ায় বিষয়ে কর্মচারীরা জানায়, বালু, তেল, সিমেন্টবাহী জাহাজ ও বড় নৌকার কারণে প্রায়ই ওয়াটার ট্যাক্সিকে দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হয় নদীতে। এদিকে বুড়িগঙ্গার তীর সংরক্ষণের জন্য গতি কমানোর নির্দেশও রয়েছে চালকের উপর। ফলে নিয়মিত যাত্রীরাও ওয়াটার বাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, এ পথটুকু যেতে ওয়াটার বাসে লাগে ৪০ টাকা, সেখানে গাড়িতে ২০ টাকা।  

সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী মিরপুর ঘাটে অলস সময় পার করতে দেখা গেল ওয়াটার বাস কর্মচারীদের। এছাড়া গাবতলীর ওয়াটার বাস ঘাটের চিত্র দেখলেই কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা স্পষ্ট বোঝা যায়। নামার মুখে সারি সারি ট্রাক দিয়ে আটকানো ঘাট। ট্রাক দিয়ে এমনভাবে ঘাটের মুখ বন্ধ করা ওয়াটার বাস স্ট্যান্ড খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।  

এ বিষয়ে চালক নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন ৬টি ওয়াটার বাস রয়েছে। পালা করে প্রতিদিন দুইটা গাবতলী-বাবুবাজার যাতায়ত করে। বাকীগুলো বসে থাকে। একমাস পর আবার অন্য দুইটা চলে। সারাদিন মিলে ১০ জন যাত্রীও পাওয়া যায় না। কোনো কোনো দিন একজনও নাই -এরপরও ট্রিপ যায়। মোট কথা হচ্ছে, সরকার চালাচ্ছে আমরা চালাই।

যাত্রী না পাওয়ার কারণ হিসেবে চালকের সহকারী (গ্রিজার) জীবন বলেন, পানির দুর্গন্ধ  কারণে কোনো ভদ্র যাত্রী ওয়াটার বাসে ওঠে না। তার উপর সময়ও লাগে বেশি। সরকারের টাকা খরচ করার জায়গা নেই তাই এখানে করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, ১৫ দিনে ১৫০০ লিটার তেল লাগে একটা ওয়াটার ট্যাক্সি চালাতে। এ প্রকল্পে সবাই লুটে পুটে খাচ্ছে। খামাখা ওয়াটার বাসগুলো বসিয়ে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে। নতুন করে চিন্তা ভাবনা করে আবার চালু করা দরকার, না হলে বন্ধ করবে। দেশের ক্ষতি করে কোনো লাভ নেই।  

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া প্যাসিফিকের কয়েকজন শিক্ষার্থী ওয়াটার বাসের উপর থিসিস করছেন। তারাও এসেছেন গাবতলীতে।  

সুমিত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যানজটের নগরীতে ওয়াটার বাস সার্ভিস একটি ভালো উদ্যোগ ছিলো। যেখানে সার্ভিসটি জনপ্রিয় হওয়ার কথা সেখানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা যাচ্ছে। যাত্রীদের ওয়াটার বাস উঠার অ্যাকসেস পয়েন্ট পযর্ন্ত ট্রাকের দখলে। তার উপর ভাড়া বেশি, দুর্গন্ধময় পানি; সময় বেশি নিচ্ছে তাহলে যাত্রীরা কেন ঝুঁকবে ওয়াটার বাসে!

ওয়াটার বাস নিয়ে যতদুর কাজ করছি তাতে মনে হচ্ছে, মনোযোগহীনতা এবং পরিকল্পনাহীনতায় ওয়াটার বাস সার্ভিসের করুণ দশা। তবে কর্তৃপক্ষ যদি সমস্যা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয় তাহলে সার্ভিসটি জনপ্রিয় হবে। তার আগে বুড়িগঙ্গার দূষণও কমাতে হবে। তাহলে মানুষের চলাচলের ভোগান্তিও কমবে বলে জানায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এ শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৮
এমসি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।