নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা মেহেদী হাসান স্মরণ করছিলেন ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা। কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার হয়ে নেপালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মেহেদী, স্বর্ণা ও অ্যানিকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় কেবিনে চিকিৎসারত মেহেদী কথা বলছিলেন তার ভাই লুৎফর রহমানের সঙ্গে। লুৎফর বাংলানিউজকে বলেন, আশঙ্কামুক্ত হলেও প্রচণ্ড মানসিক চাপ আর আহাজারি নিয়ে বেঁচে আছে তিনজন। মেহেদী বলেছেন, ঘটনা আঁচ করতে পেরে প্রিয়ক আগেই সতর্ক করে দেন সবাইকে, ‘সবাই রেডি হও। আমাদের কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। ’ দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রিয়ক সিটবেল্ট খুলে ফেলেন। এটাই তার জন্য বিপদ হয়ে ওঠে। বের করা কঠিন হয়ে পড়ে তাকে তাকে।
শনিবার (১৭ মার্চ) ঢামেকের বার্ন ইউনিটের ছয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ৪ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন অ্যানি। চিকিৎসার স্বার্থে স্বজনদের প্রবেশাধিকার পর্যন্ত সংরক্ষিত করা হয়েছে। দু’জন করে খুব অল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ পাচ্ছেন।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে লুৎফর জানান, অ্যানি তরল খাবার খেতে পারছেন। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়ে যাওয়া ছাড়াও পা ভেঙে যাওয়ায় হাঁটতে পারছেন না। তবে কথা বলছেন আর বারবার কন্যা প্রিয়ময়ীকে খুঁজছেন।
প্রিয়ময়ী সম্পর্কে জানতে চাইলে লুৎফর বলেন, মেয়েটা অনর্গল ইংরেজিতে কবিতা বলতে পারতো। ‘প্রিয়ময়ী’ বলে সবাই তাকে আদর করে ডাকতো। সবার খুব আদরের। পরিবারের বাকি সবাইও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। প্রিয়ক খুব ভালো ফটোগ্রাফার ছিলো। আর এই কাজে অনেক পুরস্কারও পেয়েছিলো সে। এদিকে সরকার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আমাদের সব ধরনের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
চিকিৎসাধীন স্বর্ণার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বন্ধু সোমা ও ইশরাত। কিন্তু অনুমতি পাচ্ছিলেন না।
দু’জন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এমনকি ওর পরিবারও চেয়েছিল ওকে স্কয়ার কিংবা অ্যাপোলোতে চিকিৎসা করাবে। কিন্তু সরকার ওদের পুরো দায়িত্ব নেওয়ায় তা আর হচ্ছে না। যদিও কর্তব্যরত ডাক্তার বলছেন, স্বর্ণাকে প্রায় মাসখানেক চিকিৎসার আওতায় রাখতে হবে। কিন্তু একজন ডাক্তার হিসেবে আমাদের মনে হয়েছে ওর অবস্থা ততোটা গুরুতর নয়। ও খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে এবং বাড়ি ফিরে যেতে পারবে।
একই অবস্থা মেহেদী ও আরেক আহত প্লেনযাত্রী শাহরিন আহমেদেরও। দু’জনের শরীরই পুড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ করে।
প্লেন দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় সরকার ১৩ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। এর প্রধান করা হয়েছে। ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমাদের নতুন যে মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়েছে তাতে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন। আজ সকালে তারা এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদেরকে আশ্বস্ত করে গেছেন। এছাড়া সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়টা হচ্ছে বার্নের রোগীদের জীবাণু সংক্রমণটা অনেক সহজে হয়। যে কারণে আমরা তাদের আশেপাশে অন্যান্য মানুষদের কম ভিড়তে দিচ্ছি। একেবারে না আসতে দিলে ভালো হয়। কিন্তু না পারতে আমাদের এ প্রক্রিয়া চালাতে হচ্ছে, তবে খুব অল্প সময়ের জন্য।
চিকিৎসাধীনরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন আশাবাদ ব্যক্ত করে সামন্ত লাল সেন বলেন, সুস্থ হলেও সরকারি নির্দেশনা অনুসারে তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে ইউএস-বাংলার প্লেনটি বিধ্বস্ত হলে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৪৯ জনই নিহত হন। এর মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জনই বাংলাদেশি। আহত হন ১০ বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ডা. রেজওয়ানুল হক শাওন নামে এক যাত্রীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৫ ও ১৬ মার্চ) ঢাকায় আনা হয়েছে মেহেদী, স্বর্ণা, অ্যানি, শাহরিনকে। সবশেষ শনিবার আনা হয়েছে শেখ রাশেদ রুবায়েতকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
এমএএম/এইচএ/