ব্যবসায়ীদের মন্তব্য, হাজারীবাগে পশুর চামড়ার সঙ্গে জড়িত সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ট্যানারির মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য আলাদা কোনো বাজার বা জায়গা দেয়নি। তাই এবারো লালবাগের পোস্তা আর হাজারীবাগে চামড়া কেনা-বেচার কাজ চলছে।
হাজারীবাগ এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদই দেশের মোট চামড়ার সিংহভাগ যোগান ও সবচেয়ে ভালো মানের চামড়া সংগ্রহের মৌসুম। আর এ সময়েই বিশাল ও মূল্যবান ব্যবসা ধ্বংসের আশঙ্কার প্রথম কারণ ট্যানারি মালিকরা গত ঈদের টাকাও পরিশোধ করেনি। তারা না দিলে চামড়া ব্যবসায়ীরা টাকা পাবে কোথায়? এটাই তো বেশিরভাগ কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের একমাত্র উপার্জনের উপায়। তবে মৌসুমি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের অবস্থা এতটা নাকাল নয় বলেও জানা গেছে।
দ্বিতীয়ত, হাজারীবাগ থেকে চামড়া জাতীয় সব কার্যক্রমকে সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। চামড়ার কারখানা এ এলাকায় না থাকলেও কাঁচা চামড়া সংগ্রহের কাজ এখানে এখনও চলছে। সেজন্য পুলিশ ব্যবসায়ীদের আইনানুসারে আটক করছে বলে জানিয়েছেন হাজারীবাগ এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা। আবার রাস্তার পাশে চামড়া রাখার ক্ষেত্রে পুলিশ কর্তৃক চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। এদিকে চামড়ার জন্য লবণের দামও বাড়তি।
ব্যবসায়ীদের মতে, বিভিন্ন কারণে কাঁচা চামড়ার দাম বেড়ে যাচ্ছে, কাঁচা চামড়া প্রসেসিংয়ে বাধায় চামড়ার মান কমছে, এতো বেশি দামে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের চামড়া ট্যানারি মালিকরা নাও নিতে পারে, আবার ট্যানারি মালিকদের জন্য তাদের ব্যবসায়িক পুঁজি শেষ হয়ে ঋণের বোঝা টানা শুরু হয়েছে। এসব কারণেই এ শিল্পের আসন্ন ধ্বংস দেখছেন তারা।
শনিবার (২৫ আগস্ট) হাজারীবাগ এলাকা ঘুরে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
হাজারীবাগ এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ী মো. রাজীব আহমেদ বাংলানিউজকে এ বিষয়ে জানান, এটা আমাদের পৈতৃক ব্যবসা, এ এলাকাতেই চলছে। সরকার কারখানা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে, আর তা তো হয়েছেই। এ এলাকায় কোনো ট্যানারি এখন নাই। কিন্তু কাঁচা চামড়ার বাজার তো এখানেই রয়ে গেছে। আমরা এখানে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করি বা সবাই এখানেই নিয়ে আসে। আর কোনো নির্দিষ্ট জায়গাও তো নাই। হুট করেই তো ট্যানারির গেটের সামনে চামড়া রেখে আসা যায় না। আমরা তো ট্যানারির মালিক না। চামড়া সংগ্রহ করে কমপক্ষে ১০ দিন লবণ দিয়ে রাখতে হয়। নইলে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ এখানে চামড়া রাখতে দিচ্ছে না। আমাদের অনেককেই রাস্তার পাশে চামড়া রাখার কারণে আটক করে নিয়ে গেছে। আবার এ সুযোগে মোটা অংকের চাঁদাও দাবি করছে তারা। যার কারণে খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে কাঁচা চামড়ার দাম বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আবার ট্যানারি মালিকরাও আমাদের গত বছরের পাওনা টাকা দেয়নি। তারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া অবস্থায় আছে। আমরা নিজেরা ধার নিয়ে এবার ব্যবসা করছি। এবারের টাকা কবে দিবে তার কোনো ঠিক নেই। এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এরপরে আমরা আর ব্যবসা করতে পারবো কিনা সেই সন্দেহে রয়েছি। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
আমরা গতবারও এখানে কাঁচা চামড়া প্রসেসিংয়ের প্রাথমিক কাজ করেছিলাম। যা করতেই হবে। এবার আর এখানে করা যাবে না এমন হুঁশিয়ারি পুলিশ আমাদের আগে দিলে অন্য ব্যবস্থার কথা ভাবতাম।
রুহুল আহমেদ নামের আরেক কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ যদি আগে জানাতো তাহলে আমরা অন্য জায়গার কথা ভাবতাম বা ব্যবস্থা করতাম। আমাদের আগে থেকে কিছুই জানায়নি। এখন এসে চাপ প্রয়োগ করছে। এভাবে খরচ বৃদ্ধি ছাড়াও লবণের দামও অনেক বাড়তি। ঈদের শুরুতে একটা ৬০ কেজি লবণের বস্তার দাম ৭৫০ টাকা দাম ছিল। এখন তা ১২০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আবার দু’দিনের বেশি চামড়ায় লবণ দিয়ে রাখতেও পারছি না এখানে। যে কারণে চামড়ার গুণাগুণ ভালো থাকবে না। এই কাজ তো আমাদের করার কথা। ট্যানারি মালিকদের না। এখন ট্যানারির সামনে চামড়া রেখে আসবো। মালিকরা দয়া করে নিলে নিবে আর না নিলে কি হবে তা জানি না।
এদিকে এ পরিস্থিতির কারণে হাজারীবাগ এলাকায় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন সাবেক চামড়া ব্যবসায়ীর সন্ধানও মিলেছে। উপার্জন না থাকায় তাদের মানবেতর জীবন যাপন করেত হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে হাজারিবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে একই থানার উপ-পরিদর্শক (প্রেট্রোল) আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রাস্তার পাশে চামড়া রাখা নিষেধ। তাই আমরা তাদের সতর্ক করছি। এসময় তিনি বাকি প্রশ্নের উত্তর দিতে বা তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি প্রদান করেন।
এদিকে হাজারীবাগ এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মো. হাশেম সরদার বাংলানিউজকে জানান, আমাদের অনেকেই টাকা পাইছে। সব ট্যানারি মালিকরা দূরাবস্থায় নাই। তবে বেশিরভাগই দূরাবস্থায়। আর আমরা সারা বছর এই কাজ করি না। গরুর চামড়া ৮০০-১০০০ টাকায় কিনে সব খরচ মিলিয়ে ১৫০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি, গরুর মাথার চামড়া ২০-২৫ টাকায় কিনে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি এবং ছাগলের মাংস ৩০-৪০ টাকায় কিনে ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করবো। তবে এখানে চামড়া রাখতে দিচ্ছে না পুলিশ। এ সমস্যায় আছি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ