ঢাকা, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দগ্ধ রাব্বি মা-বাবাকে খুঁজছে

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৮
দগ্ধ রাব্বি মা-বাবাকে খুঁজছে হাসপাতালের বিছানায় দগ্ধ রাব্বি

ঢাকা: আমার কিছুই হয়নি, তোমরা আমার মা-বাবার দিকে খেয়াল রাখো। আমার জীবনের সবকিছু মা-বাবা। আমার মা-বাবা কেমন আছে? আমার বোন ও আমার পরিবার কেমন আছে? 

৪৪ শতাংশ পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে দগ্ধ রাব্বি এভাবেই চিৎকার করে প্রশ্নের উত্তর খোঁজে ছোট ভাই শাকিলের কাছে।

জবাবে শাকিল জানায়, তোর চেয়ে অনেক অনেক ভালো আছে মা-বাবা ও অন্যরা।

তুই চিন্তা করিস না, কিছুদিনের মধ্যেই তুই ভালো হয়ে যাবি। তখন সবাইকে তুই দেখতে পাবি।  

গত ২১ আগস্ট রাত সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর একটি বাড়ির নিচতলায় পানির রিজার্ভ ট্যাংক বিস্ফোরণে একই পরিবারের ছয়জনসহ মোট নয়জন দগ্ধ হন।  

দগ্ধ অবস্থায় ওইদিনই সবাইকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে রাব্বির বাবা সুরত আলী, মা বেদেনা বেগম, বোন আলেয়া, শিশু ভাগনি মিলি ও রাব্বির স্ত্রী লাবনীর মৃত্যু হয়।  

রাব্বি এখনো জানে না তার বাবা-মা, স্ত্রী, বোন আদরের ভাগ্নি চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। তাকে জানতে দেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু সে বারবার জানতে চাইছে তার বাবা-মার কথা। মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে তার আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোনেরা।

কথা হয় ছোট ভাই স্কুল ছাত্র শাকিলের সঙ্গে। সে জানায়, একে একে সবাই চলে গেছে, আমরা এতিম হয়ে গেছি। ভাই রাব্বিকে অন্তত বাঁচাতে হবে। বাবা-মাসহ পাঁচজনের মৃত্যুর সংবাদ ভাই রাব্বি জানতে পারলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না। যেকোনোভাবেই ভাইকে বাঁচাতে হবে।

শাকিল আরও জানায়, আমরা চার বোন, দুই ভাই। ঘটনার সময় আমার বড় বোন শিউলি শ্বশুর বাড়িতে ছিল। মেজ বোন শেফালি বাহিরে ছিল, আমারই ছোট বোন পাশের বাসায় ঈদ উপলক্ষে হাতে মেহেদি দিচ্ছিল, আমি নিজেও ছিলাম বাজারে। তাই বেঁচে গেলেও আজ আমরা মৃত। কাউকে বোঝাতে পারবোনা কি অবস্থায় আছি আমরা।  

সে জানায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ভাবী লাবনীর মরদেহ তার বাবার বাড়ি শরীয়তপুরে দাফন করা হয়েছে। বাকি চারজনকে মিরপুরের কালশির একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার পার্থ শংকর পাল জানান, ৪৪ শতাংশ পোড়া নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রাব্বির অবস্থাও ভালো না। তারও শ্বাসনালী বার্ন আছে। মুখমণ্ডলসহ দুই হাত, দুই পা আগুনে ঝলছে গেছে।  রাব্বির অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এর আগে যে পাঁচজন মারা গিয়েছিল সবারই শ্বাসনালী পুড়েছিল। এ কারণে তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় দগ্ধ মোশারফ হোসেন, জিসান ও আউয়াল হোসেন বাবুর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৮
এজেডএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।