সড়ক ও মহাসড়কে ধীরগতির এসব ছোট যানবাহনের কারণেই দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে গত সোমবার (২৭ আগস্ট) সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের ৪২তম সভায় মত প্রকাশ করা হয়।
একইসঙ্গে দেশের সব জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার ধীরগতির যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
অবাধে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চললেও এসব বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে অতীতের মতোই এই নিষেধাজ্ঞা আদৌ টেকসই হবে কি-না এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
মহাসড়কের বাইপাস মোড়, চুরখাইসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেলো, কোন রকম অভিযান না থাকায় নির্বিঘ্নেই মহাসড়ক দাপিয়ে চলছে তিন চাকার এসব অবৈধ যান।
বিশেষ করে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের সূচনা পয়েন্ট চরপাড়া মোড় থেকেই দিব্যি ছেড়ে যাচ্ছে তিন চাকার ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রা। বিপদজনক এসব যানবাহন শহরের এই মোড় থেকে যাচ্ছে ত্রিশালের চুরখাই, বৈলর, মুক্তাগাছা, নেত্রকোণার কেন্দুয়াসহ বিভিন্ন প্রান্তে।
শহরের চরপাড়া পয়েন্টেই চার লেনের মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের স্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য হাঁক দিচ্ছিলেন মাইনুল ইসলাম (৫০) নামে সিএনজিচালিত এক অটোরিকশার চালক।
মহাসড়কে তিন চাকা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও কীভাবে চালাচ্ছেন প্রশ্ন করতেই মাইনুল বলেন, ‘টোকেন’ থাকলে কোনো সমস্যা নেই। পুলিশও বিরক্ত করে না। কিসের ‘টোকেন’ জানতে চাইলে পাশেই দাঁড়ানো ওমর ফারুক (৩৫) নামের আরেকজন সিএনজিচালক প্যান্টের পকেটের মানি ব্যাগে হাত দিলেন।
সযত্নে রাখা টোকেনটি হাসিমুখেই বের করে দেখালেন। ভিজিটিং কার্ডের আদলে ৪২৯৪ নম্বরের টোকেনটিতে রয়েছে একটি স্বাক্ষর ও চলতি বছরের আগস্ট মাসের কথা। এই টোকেনের বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে চালক মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘এই টোকেনের মাধ্যমে অন টেস্ট তিন চাকার মাসিক বখরা ৪শ’ টাকা।
‘আর নাম্বার প্লেট থাকলে ২শ’ টাকা। মদন বাবু নামের এক লোক পুলিশের হয়ে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই টাকা তুলে নিয়ে যান। ’
জানা গেছে, অবৈধ এই স্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রা চলাচল করে। সেই হিসেবে টোকেনের মাধ্যমে এসব যানবাহন থেকে বখরা আদায় করা হচ্ছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা।
এই মহাসড়কের সদর উপজেলার বাইপাস মোড় পয়েন্টে অবস্থান করে দেখা গেলো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রর মতোই সমানতালে দাপিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এখানেই কথা হলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক চুরখাই এলাকার নাজমুল (৩০) ও শামীমের (২৫) সঙ্গে।
তারাও জানান, পুলিশকে ম্যানেজ করেই এই পয়েন্ট থেকে এই মহাসড়কে অটো রিকশা চালাচ্ছেন। তবে মাত্র ক’দিন আগে নিষেধাজ্ঞা হওয়ায় ফাঁক-ফোকরের মধ্যেই চালাতে হচ্ছে।
তিন চাকার যানবাহন চলাচলে মহাসড়কে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির বাস বিভাগের সম্পাদক বিকাশ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরতে যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে স্থানীয় প্রশাসনও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ক’দিন এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নও হয়েছিলো। কিন্তু এরপরেও এসব যান মহাসড়কে কীভাবে এখনো কীভাবে চলে এই প্রশ্ন আমারও। ’
টোকেনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) মো. আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজ খবর নেওয়া হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব বিষয়ে নূন্যতম ছাড় দেওয়া হবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৮
এমএএএম/জেডএস/