তবে পুলিশ, র্যাব, বিআরটিএ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকায় এবারের ঈদযাত্রা ঈদুল ফিতরের তুলনায় দুর্ঘটনা ১৪.৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ২৩.৫৯ শতাংশ এবং আহত ২৪.১১ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
শুক্রবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৮ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ঈদযাত্রার ১৩ দিনে সংঘটিত দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২৯.১৮ শতাংশ বাস, ২৩.৬ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৬.৬ শতাংশ নসিমন-করিমন, ৫.৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১১.১৫ শতাংশ অটোরিকশা, ১৬.৭২ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল এবং ৯.১৬ শতাংশ অন্যান্য যানবাহন।
মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩১.৩৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪.৩৫ শতাংশ পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৭.৫৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১.১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ১.২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেচিয়ে ও ৫.০২ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে সংগঠিত হয়েছে।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকায় রেজাউল করিম রনি নামে এক যুবককে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। ময়মনসিংহের নান্দাইলে লেগুনা ও অটোরিকশা থামিয়ে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় ৪ যাত্রীকে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
হতাহতের মধ্যে ১২ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন চিকিৎসক, ২ জন প্রকৌশলী, ২ জন সাংবাদিক, ২ জন শিক্ষক, ২০ জন শিক্ষার্থী, ৫৯ জন নারী, ৩৪ জন শিশু, ৪২ জন চালক-হেলপার এবং ৮ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফোয়ারার সভাপতি ইকরাম আহমেদ, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক প্রমুখ।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা সুপারিশমালা হলো-
- সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় রোড সেফটি ইউনিট গঠন করে এ ইউনিট কর্তৃক নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
- প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা।
- নিয়মিত রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা।
- ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা।
- ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা।
- মহাসড়কে ধীরগতি যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।
- ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া।
- মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন করা।
- ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত করা।
- জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাত, আন্ডারপাস ও ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ