ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মাসেতুর আরও ৪ পিলারের নকশা চূড়ান্ত, বাকি ৭

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮
পদ্মাসেতুর আরও ৪ পিলারের নকশা চূড়ান্ত, বাকি ৭ পদ্মাসেতুর দৃশ্যমান পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: দ্রুত এগিয়ে চলেছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ। সম্প্রতি সেতুর ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। 

সমাধান পাওয়া এসব পিলারে যেই পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে তা দেশে প্রথম এবং বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি সেতুতে হয়েছে। বাকি ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ নম্বর পিলারের চূড়ান্ত নকশা অক্টোবরের মধ্যে আসবে বলে আশাবাদী প্রকৌশলীরা।

নদীতে যে পাইল বসবে তার ১৬৯টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কাজ পিছিয়ে পড়ে। তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি কাজ শেষ করতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।  

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, কাজের গতি সচল রাখতে ঈদে ছুটি নেননি প্রকৌশলীদের বড় একটি অংশ। জাজিরা প্রান্তে স্প্যান ও বেয়ারিংয়ের সংযোগ দৃঢ় করতে চলছে ঝালাইয়ের কাজ। এটি শেষ হলে ভেতরে বসবে কংক্রিটের গার্ডার। প্রতিটি ইন্টারভ্যাল পিলারের ওপর দু’টি বেয়ারিং এবং মুভমেন্ট জয়েন্টে চারটি করে বেয়ারিং বসছে। সেতুর ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের পাইল সম্পন্ন হয়েছে। পিলারগুলোতে পরবর্তী ধাপের কাজ চলছে। সেতুর রোডওয়ে বক্স স্লাভ ৪৫টি ও রেলওয়ে ৬৫০টি বক্স স্লাভ শেষ হয়েছে। নদীতে যে পাইল বসবে তার ১৬৯টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে।  

আরোও জানা যায়, নকশা চূড়ান্ত হওয়া চারটি পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং (Screen grouting) করে সমাধান মিলেছে। দেশের প্রথম কোনো সেতুতে স্ক্রিন গ্রাউটিং হচ্ছে। হাতেগোনা বিশ্বের কয়েকটি সেতুতে এটি হয়েছে। পদ্মানদীর সয়েল কন্ডিশন ভালো না। প্রথমে এখানে বেজ গ্রাউটিং করেও ভালো ফলাফল আসেনি। তাই নতুন করে স্ক্রিন গ্রাউটিং করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ১২৬ মিটার পাইলের বডির ভেতর চারপাশে সিমেন্ট ঢোকানো হবে। এর জন্য ড্রেন করে রাখতে হবে। যাকে বলা হয় প্যাম্প সার্কিট। প্যাম্প সার্কিটের ১ মিটার পর পর ৮ এম এম ডায়ার ছিদ্র হবে। ট্যাম্পে ১ এমপিএ থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক শূন্য প্রেসার (চাপ) সেট করা হয়। এরপর প্রেসার দিয়ে সিমেন্ট গ্রাউট ঢোকানো হয়। যখন কাদামাটির সঙ্গে চলে যাবে তখন বন্ডিং হয়ে সারফেজ তৈরি করবে। পাইলের চারদিকে গ্রাউটের একটি শক্তিশালী লেয়ার তৈরি হয়। যা পাইলের লোড বেয়ারিংয়ের ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ও কোথাও খুঁত থাকলে তা সেরে যায়। ট্যাম্প পাইপ যদি পাইলের কংক্রিট কাস্টিংয়ের আগে ইনস্টল করে দেওয়া হয়। এ কাজে ড্রিলিং যদি সতর্কভাবে না করা হয় তবে ড্রিলিংয়ের ভার্টিক্যালি মুভে পাইলের কংক্রিটের মধ্যে ড্রিলিং হয়ে যেতে পারে। স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের জন্য Chemgrout মেশিনের প্রয়োজন যা বিদেশ থেকে আনা হবে। একটি পাইলে দু’টি Chemgrout মেশিন দরকার হয়। পিডিএ (পাইল ড্রাইভিং এনালাইসিস) টেস্টে যেসব পাইল উত্তীর্ণ হতে পারে না সেগুলোর জন্য স্ক্রিন গ্রাউটিং এর ব্যবস্থা।  পদ্মাসেতুর একটি পিলার।  ছবি বাংলানিউজ

মূল সেতুর প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, পাইলিংয়ের জন্য ২৯-৩২ নম্বর পিলারের ওপর লোহার পাত লাগাতে হয়। বর্তমানে সেই পাতগুলো ওয়েল্ডিং করে লাগানো শুরু হয়েছে। নকশা বাকি থাকা ৭টি পিলারে টিডি-১০ নামে টেস্টিং পাইলের পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। এর আগে “থ্রী সি” নামে একটি টেস্ট পাইলের পরীক্ষা করা হয়। যার ফলাফল ভালো এসেছে এবং সে রিপোর্ট বিদেশে পরামর্শকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ২০ সেপ্টেম্বর ৭টি পিলারের টিডি-১০ নামে টেস্টিং পাইলের পরীক্ষা শেষ হবে। ৭টি পিলারের চূড়ান্ত অনুমোদন আসতে পারে চলতি বছরের অক্টোবরে। জটিলতায় থাকা ৭টি পিলারেও স্ক্রিন গ্রাউটিং করা হবে। সেতুর ৩৬ নম্বর পিলারে পাইল ক্যাপ ও রড বাইন্ডিংয়ের কাজ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।  

মূল সেতুর সহকারী এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে সেতুতে গাড়ি ও ট্রেন চলাচল করতে পারবে।  

উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যানটি। এর প্রায় ৪ মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখি সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।