ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

১৮৫ কিলোমিটার নদীপথ জয়ের পথে মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮
১৮৫ কিলোমিটার নদীপথ জয়ের পথে মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য

শেরপুর: নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য টানা ৩১ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করেছেন।

মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কংস নদীর জারিয়াঝানঝাইল এলাকা অতিক্রম করে মগড়া নদীর পথে আছেন তিনি।  

এর আগে সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ব্রিজ থেকে সাঁতরে ১৮৫ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে সাঁতার শুরু করেন ক্ষিতীন্দ্র।

এর আয়োজন করেন যৌথভাবে নেত্রকোনার মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ী পৌরসভা।  

নৌকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ক্ষিতীন্দ্রের ভাগিনা বিমান বৈশ্য বাংলানিউজকে জানান, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদী, ফুলপুরের নাহাগাঁও, ধোবাউরা উপজেলার গোয়াতলা, পুরা কান্দুলিয়া, পূর্বধলা উপজেলার লেটিরিকান্দা, জারিয়া ঝানঝাইল কংস নদী পর্যন্ত প্রায় ১০২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তার প্রায় ৩১ ঘণ্টা সময় লেগেছে।  

আগামী ২৪ ঘণ্টায় কংস নদীর নেত্রকোনার তাঁতিঘর, ঠাকরাকোনা, ভাটিপাড়া, আটপাড়া, নাজিরগঞ্জ বাজার শ্রীপুর জামে মসজিদ, বাড়িভাদেরা ব্রিজ হয়ে মদনের মগড়া নদীর দেওয়ান বাজার ব্রিজ ঘাট পর্যন্ত বাকি ৮৩ কিলোমিটার পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৩১ ঘণ্টার সাঁতারে রাতে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। মামার চোখ কিছুটা লাল হয়ে গেছে, তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হলেও, মানসিকভাবে সতেজ এবং সুস্থ রয়েছেন। নৌকা থেকে বাজানো তার পছন্দের গান আর নদীর দু’ধারে শত শত উৎসুক মানুষের উৎসাহে তিনি জয়ের পথে এগিয়ে চলেছেন। আশা করছি সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মগড়া নদীর দেওয়ান বাজার ঘাট এলাকায় পৌঁছাবেন, এতে তার ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতার শেষ হবে।  
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য সাঁতরাচ্ছেন
আমেরিকার নাগরিক ডায়ানা নাঈদের ২০১৩ সালে কিউবা টু ফ্লোরিডা সাঁতারের ১৭৭ কিলোমিটার দূরপাল্লার সাঁতারের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতে তিনি এ দূরপাল্লার সাঁতারে নেমেছেন। ৬৭ বছর বয়সে রেকর্ড ভাঙার এ মনোবলকে স্বাগত জানিয়েছে সব শ্রেণীপেশার মানুষ।

তাকে সার্বক্ষণ সহযোগিতা করতে দু’টি নৌকা ও একটি স্পিডবোট রয়েছে। এছাড়া গিনেস বুকে পাঠানোর জন্য বিরতিহীনভাবে সাঁতারের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে।
 
উল্লেখ্য, ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য’র বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি পাস করেন। সাঁতার কেটে এ পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে চারটি পুরস্কার পেয়েছেন। সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড গড়ার স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণভবনে তাকে রুপার নৌকা উপহার দেন।  

এছাড়া ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র গত বছরের ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কংস নদ সরচাপুর সেতুর কাছ থেকে সাঁতার শুরু করেন। ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নেত্রকোনার বড়ওয়ারি সেতুর কাছে পৌঁছান। এতে ৪৩ ঘণ্টায় তিনি ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতরান।

মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গিনেস বুকে রেকর্ড করতে সার্বক্ষণিক তার একক সাঁতারের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। এই ভিডিও গিনেস বুকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তারা সব দেখে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনদিনের মধ্যে নাগরিক কমিটির আয়োজনে এই কৃতিমান সাঁতারুকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।  

** রেকর্ড গড়তে ১৮৫ কি.মি. সাঁতারে মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।