খুলনা জেলার নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেন।
মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ১৩ আগস্ট জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব নেন।
খুলনায় যোগদানের আগে তিনি খাদ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার হীরাপুর গ্রামে ডিসি মো. হেলাল হোসেনের বাড়ি।
মাদক প্রসঙ্গে ডিসি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দশনা পাওয়ার পরেই মাঠ পর্যায়েই মাদকের ব্যাপারে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান। এক্ষেত্রে সরকারের অনেক সফলতাও আছে। সেক্ষেত্রে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন অনেক সময় গভীর রাতেও অভিযান চালিয়েছি। আমি চেষ্টা করবো প্রত্যেকের সহোযোগিতা নিয়ে এই জেলাকে মাদকমুক্ত করতে।
ডিসি হিসেবে যোগদানের পর কোন বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খুলনা একটি বিভাগীয় শহর। এখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প ও মেগা প্রকল্প চলমান। কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করারও চেষ্টা করবো। আমার টপ প্রায়োরিটি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়। বিশেষ করে প্রকল্পটি কখন শুরু হবে কখন শেষ হবে সব কিছুর গাইড লাইন দেবো।
‘অনেক সময় আমরা দেখি বিভিন্ন কারণে এই ডেভেলপিং প্রোজেক্টগুলো সময়মতো হয় না। এজন্য অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা কাজ করে এটাও সত্য। আমরা চেষ্টা করবো যেন সরকারের প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের জেলা প্রশাসনের যা যা করার দরকার করবো। ’
ডিসি বলেন, আমি যেটা ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্ব দেবো, তা হলো সরকারের কাজগুলো যাতে কোয়ালিটি এনশিওর হয়। সেই কোয়ালিটি এনশিওর করার ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলো জেলা প্রশাসক হিসেবে আমাদের মাঝে মধ্যে পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে। সেখানে প্রকল্পের কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করবো। টাইম টু টাইম তদন্ত করবো। বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে বা জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রজেক্টগুলো করেছেন সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় ও জনগণ সে সেবাটা যাতে পায় তার চেষ্টা করবো।
অপার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর খুলনাকে নিয়ে আপনার ভাবনা কি- এমন প্রশ্নের উত্তরে হেলাল হোসেন বলেন, খুলনা একটি বিভাগীয় শহর। এখানে অনেক ন্যাচারাল রিসোর্স আছে, অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। আমাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনও আছে। পাশাপাশি এখানে সরকারের রেভিনিউ আসার অনেকগুলো খাত রয়েছে। আমাদের মোংলা বন্দর রয়েছে। বিশ্ববাজারে রপ্তানিযোগ্য অনেক কিছুই খুলনায় রয়েছে। এখানকার চিংড়ি ও কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ডিসি বলেন, খুলনায় রয়েছে জুট মিল করপোরেশনের কিছু মিল। যার এক সময় ঐতিহ্য ছিল। সেখানে আমাদের একটু নজর দিলে বা সরকারের কাছে আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারলে রুগ্ন পাটকলগুলোর সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে পারবো।
ক্লাস চলাকালীন কোচিং বন্ধে আপনার ভূমিকা কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, এখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারের শিক্ষা পলিসি যেটা আছে সে বিষয়ের আলোকে আমরা সরকারের যে নির্দশনা তা বাস্তবায়ন কারার চেষ্টা করবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশনায় স্কুল চলাকালীন কোচিং বন্ধ করা হয়েছে। তবে আমরা যেটা শুনছি এই বিভাগ বা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। যদি তা হয় তাহলে আমরা তার উপর কার্যকর পদক্ষেপ নেবো।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয়কে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে আপনার পদক্ষেপ কি হবে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় তবে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো। ভুক্তভোগী যে কেউ আমাকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেমন খুলনা রেখে যেতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি বলেন, অবশ্যই খুলনাকে একটা ভালো জায়গায় রেখে যেতে চাই। যাতে খুলনার মানুষ আমার কথা স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮
এমআরএম/এএ