রাজধানীর বনানী থানায় করা অর্থ আত্মসাৎ মামলায় মোরশেদ খানকে ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকে তলব করেছেন কমিশনের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিচালক সামছুল আলম।
অন্যদিকে, গুলশান থানায় করা অর্থ পাচার মামলায় ২০ সেপ্টেম্বর তারা পিতা-পুত্রকে দুদকে তলব করেছেন দুদকের উপ পরিচালক তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জা জাহিদুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পৃথক চিঠির মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই তলব করেন বলে বাংলানিউজকে জানান দুদকের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
মোরশেদ খান বিএনপি সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে এসব অর্থ পাচার করেন বলে অভিযোগ আসে দুদকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। একইসঙ্গে মামলায় আসামি করা হয় তার স্ত্রী নাসরিন খান এবং ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খানকে।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, তারা তিন কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৪০ মার্কিন ডলার এবং এক কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৩ হংকং ডলার মিলিয়ে মোট ৩২১ কোটি সাত লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৯ টাকা পাচার করেছেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, মোরশেদ খানের প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট টেলিকম লিমিটেডের মাধ্যমে ১১টি বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ৩২১ কোটি সাত লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৯ টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছেন তারা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার পাঠানো নোটিসে বলা হয়েছে, মোরশেদ খান, তার স্ত্রী নাসরিন খান ও ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খানের মালিকানাধীন বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত ফারইস্ট টেলিকমের নামে সাতটি মাল্টি কারেন্সি হিসাব রয়েছে। যার মধ্যে চারটি ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট, একটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড হিসাব, একটি ইউএসডি কারেন্ট হিসাব ও একটি ইউএসডি সেভিংস হিসাব খুঁজে পেয়েছে দুদক।
এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে মোরশেদ খানের নামে একটি ইউএসডি সেভিংস ও একটি হংকং ডলার সেভিংস হিসাব এবং ওই ব্যাংকেই ছেলে ফয়সালের নামে একটি ইউএসডি সেভিংস ও একটি হংকং ডলার সেভিংস হিসাবে এসব অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এই মামলায় ফয়সাল মোরশেদ খানকে তলব করা হয়েছে।
এদিকে, ২০১৭ সালের ২৮ জুন বনানী থানায় করা মামলায় মোরশেদ খান, তার স্ত্রী, সিটিসেলের এমডি মেহবুব চৌধুরীসহ মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের মূল কোম্পানির নাম প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড (পিবিটিএল)। মোরশেদ খান এর চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী নাছরিন খান একজন পরিচালক।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। দেনার দায়ে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের হাত ধরেই দেড় যুগ আগে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেবার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
দুদকের এ মামলার নোটিসে বলা হয়েছে, মোরশেদ খানসহ অন্যান্যরা প্রতারণা, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে পরস্পরের যোগসাজসে এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখার ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার ৩৬৩ টাকা আত্মসাত করেছেন।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) নামে টেলিকম সেবা পরিচালনার লাইসেন্স পায় সিটিসেল। পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিটিএল নাম বদলে হয় হাচসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)।
১৯৯৩ সালে মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মটরস ও ফারইস্ট টেলিকম মিলে এইচবিটিএল-এর শেয়ার কিনে নিলে এ কোম্পানির মালিকানায় পরিবর্তন আসে। কোম্পানির নাম বদলে হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড।
প্যাসিফিক মটরস যখন সিটিসেলের মালিকানায় আসে, মোরশেদ খান তখন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিনিয়োগ বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্বে। আর এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে সিটিসেল যখন লাইসেন্স পায়, মোরশেদ খান তখন ছিলেন জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ।
একমাত্র অপারেটর হওয়ার সুযোগে সিটিসেল বিএনপি সরকারের সময়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আরও কোম্পানিকে মোবাইল ফোন সেবার লাইসেন্স দেওয়া হলে সেই একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটে।
এরপর ধুঁকতে থাকা এই কোম্পানিতে ২০০৪ সালে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল। কিন্তু ব্যবসার আর প্রসার ঘটেনি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
আরএম/টিএ