বাঁধের ভেতর ও বাইরের পাশে অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার ঝুপরি ঘর তুলে বসবাস করছেন। যারা ৫-১০ বার পর্যন্ত যমুনার ভাঙনের শিকার হয়েছেন।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বংশ পরম্পরায় এসব মানুষ হিংস্র যমুনার সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে সর্বস্ব হারিয়েছেন। বিদায় বেলায় শুধু জীবন নিয়ে শূন্য হাতে ফিরেছেন। যমুনা থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাঁধ এলাকায় বসতি গড়ে তুলেছেন। নেমে পড়েছেন বেঁচে থাকার যুদ্ধে। কিন্তু আগ্রাসী যমুনা তাদের পিছু ছাড়েনি। এখনো তাড়া করেই চলছে।
কেননা যমুনার বুক ফুসে উঠছে, বানের পদধ্বনি শুরু হয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে যমুনার পানি। চলে এসেছেন বাঁধের কিনারায়। ঝুপরি ঘরগুলোর মেঝের আশপাশ দিয়ে সেই পানি কিলবিল করছে। কখন জানি সেই পানি এসে বেঁচে থাকার সামান্য আশ্রয়টুকুও কেড়ে নেয়- এই শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বাঁধ এলাকার মানুষেরা।
হাওয়া বেগম। স্বামী পান্না উল্লাহ। ঢেকুরিয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। পান্না চোখেও ভাল দেখেন না। দিনমজুরের কাজ করেন তিনি।
একান্ত আলাপকালে হাওয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, পাঁচবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আজ বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজের বলে আর কিছুই নেই। সবকিছু যমুনা গিলে নিয়েছে। আছে শুধু জানটুকু। হাড়ভাঙা খাটুনিতে চলে তাদের সংসার।
তিনি আরো জানান, বড় মেয়ে পারভীন স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। এখন ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু কোনো টাকা নেই। মেয়ে ভর্তি নিয়ে শেষ অবধি কী হবে জানা নেই তার। এছাড়া ছোট ছেলে বিজয় স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে আর মেঝো ছেলে হাসান বাবু লেখাপড়া করেনি। সে বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে। সবমিলে টেনে টুনে চলে অসহায় হাওয়া বেগমের সংসার।
ফিরোজা বেগম নামে আরেক নারী বাংলানিউজকে জানান, তাদের আসল ঠিকানা ছিলো কাজীপুরের মাইজবাড়ী গ্রাম। যমুনার ভাঙনের মুখে পড়ে এখন ঢেকুরিয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে আশ্রয় গেড়েছেন। তার ভাষায়, ‘অন্তহীন দুঃখ বাঁধের এপাশ-ওপাশের মানুষের’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ