ব্যবসায়ী ও জেলেদের মতে, অন্যান্য বছরে বৈশাখের পর থেকেই নদী ও সাগরে ইলিশের দেখা মিললেও নানা কারণে এবার তা পাওয়া যাচ্ছে আশ্বিনের শুরুতে। আবার মাত্র নয়দিন পর ছয় থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বরিশাল পোর্ট রোড মৎস অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা আশপাশের নদী ও সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই ছোট বড় নৌযান এসে নোঙর করছে অবতরণ কেন্দ্র ঘিরে। প্রতিটি নৌযান থেকে শ্রমিকরা দ্রুত নামাচ্ছেন ইলিশ। যা পরে নিলাম/ডাক প্রক্রিয়ায় বিক্রি করা হচ্ছে। সাগর ও নদীর মাছ আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি হচ্ছে, যার দরেও রয়েছে পার্থক্য।
এরপর সে মাছ ব্যবসায়ীরা নিজের গদিতে নিয়ে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করে নানা বাহনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন। আর এর মধ্য দিয়ে জেলেদের পাশাপাশি, বাজার, বরফকল, ট্রান্সপোর্ট পর্যন্ত শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। মৎস অবতরণ কেন্দ্রের শ্রমিক আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুম শুরুর প্রায় তিন মাস পর ভালো করে ইলিশের দেখা মিলেছে। চলতি সপ্তাহে বাজারে ইলিশের চাপ থাকায় কাজও বেড়েছে। তবে আর মাত্র নয়দিন বাকি আছে নিষেধাজ্ঞার। ফলে এই অল্প কয়েকদিনে যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়বে, তাতে ব্যবসায়ী, জেলে এবং আমরা শ্রমিকরা কেউই খুশি হতে পারছি না। চার মাসের কাজ ১৫ দিনে করা সম্ভব হবে না।
ব্যবসায়ী মাসুম বেপারি বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ থেকে ছয়দিন ধরে বরিশালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আসছে। যেখানে সাগরের পাশাপাশি বরিশালের কীর্তনখোলাসহ আশপাশের নদীর মাছও রয়েছে। মাছের আমদানি বাড়ায় এখন দামও কিছুটা কমে এসেছে। ঝিমিয়ে থাকা পোর্ট রোডে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। শুধু পোর্ট রোড নয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, আলিপুর, মহিপুর মৎস বন্দরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগে শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। এখন মৌসুমের শুরুতে নয়, শেষ দিকে ইলিশ ধরা পড়ছে। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসের পুরোটাই ইলিশ ধরা পড়েনি। সাগরের কিছু আসলেও নদীতে ইলিশ ধরা পড়েইনি। এখন আশ্বিনে যখন নদীর ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে তখন শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে যাচ্ছে। মৌসুমের পরিবর্তন ঘটলেও ঘটেনি নিষেধাজ্ঞার সময়ের পরিবর্তন। জেলা মৎস অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, এবার কিছুটা দেরিতে হলেও বাজারে বর্তমানে ইলিশের আমদানি বেশি রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বাজারে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ আসছে।
প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা পেছানোর দাবি জেলেদের রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলেদের এ দাবি থাকলেও হিসেব অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা অক্টোবরেই দিতে হবে। নয়তো ইলিশের প্রজননে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও এবার নভেম্বরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে নিষেধাজ্ঞার পর যদি ইলিশ না পাওয়া যায় তবে ব্যবসায়ীদের সীমাহীন ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে মণ প্রতি এলসি সাইজ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩ থেকে ২৫ হাজারে, এলসির নিচের সাইজের ইলিশ (ভ্যালকা) বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ হাজারে এবং এর নিচের সাইজ গোটলা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায়।
আর এক কেজি সাইজের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪১ হাজারে এবং ১২শ’ গ্রামের ইলিশ বিক্রি চলছে ৪৫ টাকায়।
এছাড়া এর ওপরে দেড় কেজি সাইজের ইলিশ ৬০ হাজার টাকা দরে মণপ্রতি বিক্রি চলছে।
তবে স্থানীয় নদীর ইলিশ এই দরের থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা বেশি দামে মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহে সব ধরনের ইলিশেরই মণপ্রতি তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দাম ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
এমএস/টিএ