ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আবাসিক এলাকায় পলিথিন কারখানা, গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
আবাসিক এলাকায় পলিথিন কারখানা, গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

খুলনা: আইন অমান্য করে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গার হাফিজনগর এলাকায় গড়ে ওঠেছে পলিথিন কারখানা। কারখানাটি এলাকাবাসীর জন্য শুধু ঝুঁকিপূর্ণ ও বিড়ম্বনারই নয়, রীতিমতো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে! কারখানার ঝাঁঝালো বিষাক্ত গন্ধে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন মানুষজন। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজন এ পলিথিন কারখানা থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকেন। যে কারণে বহাল তবিয়তে রয়ে যাচ্ছে কারখানাটি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার হাফিজনগর এলাকার ময়ূর নদী সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় মঈন নামের এক ব্যক্তি পলিথিন কারখানাটি স্থাপন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনার পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের নেতারা।

হাফিজনগর এলাকার আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি বলেন, সকাল-সন্ধ্যা পলিথিন কারখানার গন্ধে বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে।  
তিনি অভিযোগ করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মঈন এই এলাকায় পলিথিন কারখানা স্থাপন করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন কারখানা গড়ে তুলে সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।  

বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, পলিথিন কারখানার ধোঁয়ার আগ্রাসনে অসুস্থ হয়ে পড়ছের বাসিন্দারা। পলিথিনের ঝাঁঝালো গন্ধ বিনা বাধায় আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দূষণ ঘটাচ্ছে পরিবেশের। খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গার হাফিজনগর এলাকায় পলিথিন কারখানা।  ছবি: বাংলানিউজপরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট পলিথিন কারখানার মালিক শর্ত ভঙ্গ করেই চলেছেন। গত ২৬ আগস্ট আরও একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশটি দেওয়া হয় হাফিজনগরের মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানার মালিক মো. মঈন উদ্দিনকে।  

যদিও ওই কারখানায় কোনো সাইনবোর্ড নেই। বছরখানেক ধরেই কারখানাটি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন চালিয়ে আসছে সাইনবোর্ডবিহীন। তবে গত ঈদুল আজহার আগে স্থানীয় কাউন্সিলর এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পলিথিন কারখানাটি বন্ধের নির্দেশ দেন। পরে মালিক ঈদ পর্যন্ত চালানোর অনুরোধ করেন।  

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, হাফিজনগরের মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্রে পিপি দানা থেকে রোল পলিথিন ও সেচ পাইপ প্রস্তুতের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু সেই শর্ত ভঙ্গ করে কারখানাটি পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে নিম্ন মানের দানা প্রস্তুত করে অন্যত্র বিক্রি করা, দিনে-রাতে কাজ চালিয়ে উচ্চমাত্রার শব্দ (৭০ ডেসিবল) দূষণ, কারখানার পরিত্যক্ত পলিথিন গলানোর সময় তীব্র গন্ধ সৃষ্টি করে আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দূর্বিসহ করে তুলছে।  

যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী, শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও ওই উল্লেখ করা হয়েছে।  

এজন্য ওই কারখানার মালিককে দেওয়া পরিবেগত ছাড়পত্র বাতিলসহ কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা পুনরায় লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে কারখানার সব কার্যক্রম সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব নির্দেশনা না মানলে ওই কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম মামলা করবে। পাশাপাশি মালামাল বাজেয়াপ্ত ও জরিমানা আদায়সহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গার হাফিজনগর এলাকায় পলিথিন কারখানা।  ছবি: বাংলানিউজকিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই চিঠি উপেক্ষা করে এখনও কারখানাটির কার্যক্রম আগের মতোই চলমান রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন শুধু সামনের দরজা বন্ধ রেখে ভেতরে কারখানাটি চালু রাখা হয়েছে। আর বাইরে গন্ধযুক্ত ও পরিত্যক্ত পলিথিন শুকানোর ফলে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠেছে।  

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় দফায় চিঠি দেওয়ার পর ওই কারখানার মালিক মঈন উদ্দিন উত্তর দিয়েছেন। সেখানে তিনি  দাবি করেছেন, পরিবেশ দূষণ করছেন না এবং পরিবেশের ছাড়পত্রেরও কোনো শর্ত ভঙ্গ করছেন না।  

‘তবে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য কিসের ভিত্তিতে তিনি এমনটি দাবি করলেন সে ব্যাপারে আবারো চিঠি দেওয়া হবে। ’ 

পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. হাবিবুল হক খান বলেন, ওই পলিথিন কারখানার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাতে এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

যোগাযোগ করা হলে কারখানার মালিক মো. মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানে কারখানা রাখবো না। সবার যেহেতু অসুবিধা হচ্ছে সেহেতু আমার এখানে কারখানা রাখা ঠিক হবে না। বিকল্প জায়গা খুঁজছি। শিগগির এটি এখান থেকে সরিয়ে নেবো।  

‘আপাতত কিছুদিন সময় প্রয়োজন। সময় চাওয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে। ’

যদিও এলাকাবাসী বলছেন, বহুবার তিনি এ ধরনের সময় নিয়েছেন। কিন্তু কারখানা সরাননি।  

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, তার অজান্তেই এখানে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ওই কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।  

কারখানাটির বিরুদ্ধে আইনানুগ যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে সহযোগিতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।  

এই পলিথিন কারখানার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এমআরএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।