ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ বরগুনা শহরবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ বরগুনা শহরবাসী মাইকের যন্ত্রণায় বরগুনাবাসী অতিষ্ঠ। ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: ‘সুখবর, সুখবর, সুখবর। বরগুনাবাসীর জন্য সুখবর। মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, কাশি, হার্ট ও যৌন বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার সাহেব প্রতি মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার নিয়মিত রোগী দেখবেন....।’

‘মেলা মেলা মেলা। চিংড়ি মাছের মেলা।

আজ সন্ধ্যায় বরগুনা মাছ বাজারে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হবে....। ’ ‘আগামীকাল বরগুনার মাংস বাজারে একটি বিরাট মহিষ জবাই করা হবে। মহিষটির প্রতি কেজি মাংস.....। ’

‘ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের জন্য সুখবর। অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারা কোচিং দেওয়া হইতেছে। ’ ‘মূল্যহ্রাস মূল্যহ্রাস মূল্যহ্রাস। বিরাট মূল্যহ্রাস। এই সুযোগ আগামী...। ’মাইকের যন্ত্রণায় বরগুনাবাসী অতিষ্ঠ।  ছবি: বাংলানিউজএই ধরনের মাইকিং বরগুনা শহরের নিত্য যন্ত্রণা। বিষয়টি এখন চলে গেছে শহরবাসীর কাছে অসহনীয় পর্যায়ে। রিকশায় ও ইজিবাইকে কখনো একটি মাইক বেঁধে আবার কখনো দু’টি মাইক বেঁধে উচ্চ শব্দে দিনে-রাতে চলে এ ধরনের প্রচারণা।

দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে মাইকিং করতে এখন আর দরকার পড়ে না ঘোষকের। ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে মেবাইলের মেমোরি কার্ডে নিয়ে রিকশায় অথবা ইজিবাইকে মাইক বেঁধে চলতে থাকে দিনভর বিরতিহীন ঘোষণা।

এ তো গেল মাইকের যন্ত্রণা। এছাড়াও রয়েছে যেখানে সেখানে রাস্তার ওপর ইটভাঙা মেশিন ও কাঠের ও স্টিলের আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রের বিকট শব্দ। এর ওপর রয়েছে যত্রতত্র গান লোডের দোকানের উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সের শব্দ। আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গাড়ির হর্ন তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারণাও।

হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যেসব স্থানে মাইক বন্ধ রাখার নিয়ম রয়েছে, তাও মানছে না কেউ । ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

গেজেটে উল্লেখ করা হয়, নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫, রাতে ৭০ ডেসিবল মাত্রায় মাইকে প্রচার করা যাবে।

বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, শব্দের মাত্রা অতিক্রম করা যন্ত্রপাতি যেমন- মাইক, লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার, মেগাফোন বা শব্দ বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা অন্যকোনো যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহারে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ বিধিমালা প্রাধান্য পাবে। তবে শব্দের মাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীরব এলাকা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় ব্যবহারের জন্য আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

যার জন্য তিনদিন আগে দরখাস্ত করতে হবে। বিশেষ জরুরি ক্ষেত্রে আয়োজনের এক দিন আগে দরখাস্ত করতে হবে। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনুমতি দেবেন অথবা কারণ উল্লেখ করে দরখাস্ত নামঞ্জুর করবেন। এ ক্ষেত্রে সহনীয় পর্যায়ের শব্দের মাত্রা অতিক্রমকারী যেকোনো যন্ত্রপাতি দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার বেশি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন না। অনুমোদিত সময়সীমা রাত ১০টা অতিক্রম করতে পারবে না।

নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ইট বা পাথর ভাঙা মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টি হলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে টেলিফোনে অথবা মৌখিক অথবা লিখিতভাবে জানানো যাবে। সেক্ষেত্রে শব্দদূষণ মাত্রা অতিক্রমকারীকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৌখিকভাবে অথবা লিখিত নির্দেশ দেবেন।

এ নির্দেশ লঙ্ঘনকারীর যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি আটক করা যাবে। বিধিভঙ্গকারীকে প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলা সদরে এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। জেলা সদরে নিয়ন্ত্রণ করবেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনে পুলিশ কমিশনার অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, এছাড়া অন্যান্য এলাকায় ডিসি অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বরগুনা পৌরসুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আল-আমীন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ডজন খানেক গাড়ি দোকানের সামনে থেমে বিকট শব্দে মাইকে বিভিন্ন ঘোষণা দেয়। এর প্রতিবাদ করেও কোন সমাধান পাচ্ছিনা। এর ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এরপরও শব্দ নিয়ন্ত্রণকারী দপ্তরের কোনো তৎপরতা নেই।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। এরা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি অফিস-আদালত কিছুই মানে না। এমন নির্যাতন থেকে বরগুনাবাসীকে মুক্ত করতে প্রশাসন দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত শব্দদূষণ শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত শব্দে মস্তিষ্কে বিরক্তির কারণ ঘটে। ফলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, বিশ্লেষণ ক্ষমতা কমে যায়। কাজকর্মে মন বসেনা। মানুষ যখন ধীরে ধীরে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় তখন শব্দদূষণের মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শব্দদূষণ অবশ্যই একটি বড় ধরনের সমস্যা। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।