এদিকে ছয় বছরেও স্বামীর সন্ধান না পাওয়ায় একমাত্র সন্তান আদিত্যকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার স্ত্রী রিতা বড়ুয়া।
খেয়ে না খেয়ে কিছুদিন বাপের বাড়ি, কিছুদিন শশুর বাড়িতে, কিছুদিন ভাড়া বাসায়- এভাবেই দিন কাটছে তার।
ছেলেকে নিয়ে রামুর হাইটুপি গ্রামের শ্বশুরবাড়ির পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন রিতা। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।
রিতা বলেন, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে যখন মিছিল শুরু হয়, তখন ভয়ে আতঙ্কে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান উত্তম। কিন্তু কোথায় যাবে, কীভাবে যাচ্ছে সেদিন কিছুই বলার সুযোগ পাননি। সেই যে গেলেন, ছয় বছরেও আর কোনো খোঁজ মেলেনি। তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন কিছুই জানি না।
তিনি বলেন, অনেক খোঁজাখুজি করেছি। সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় খবরা-খবর নিয়েছি কিন্তু কোথাও সন্ধান মেলেনি।
‘২০১২ সালে আদিত্যর বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। এখন তার বয়স নয়। অনেক কষ্টে ওকে একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু অভাবের সংসারে সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ কি হবে, আদৌ পড়া-লেখা চালিয়ে যেতে পারবো কিনা, সব কিছুই অনিশ্চিত’।
রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের সুদত্ত বড়ুয়ার একমাত্র ছেলে উত্তম বড়ুয়া। পেশাগতভাবে উত্তম ছিলেন দলিল লেখকের সহকারী। একমাত্র ছেলের খোঁজ না পাওয়ায় উত্তমের বাবার পরিবারেও চলছে মানবিক বিপর্যয়।
শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড়ি গেলে উত্তমের মা মাধবী বড়ুয়া হাউ-মাও করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে উত্তম ছিল সবার বড়। স্বামীর যা আয়, তা দিয়ে মোটেও সংসার চলে না। তাই পরিবারে সহযোগিতার একমাত্র অবলম্বন ছিল উত্তম। কিন্তু ছয় বছর ধরে উত্তমের খোঁজ নেই।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে আমার বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে সবকিছু চুরমার করে দেওয়া হয়। বাড়িতে জিনিসপত্র যা ছিল তাও লুট করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবার সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সহায়তা পেলেও আমি সেই সহায়তার মুখ দেখিনি। কারণ আমি উত্তমের মা। তাই এখনো ১৫ বছরের একটি মেয়ে নিয়ে সেই ভাঙা ঘরেই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
এএ