বুধবার (০৩ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, এনপিএস নতুন মাদক হওয়ায় আমাদের তালিকাভুক্ত নয়।
তবে প্রস্তাবিত নতুন মাদক আইনে যেকোনো নতুন মাদক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আরও সহজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তাৎক্ষণিক বিচারকার্য পরিচালনার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ইতোমধ্যে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনও কাজ শুরু না করলেও শিগগিরই মাঠে নামবেন তারা। তাদের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে এবং এটা অধিদফতরের একটা বড় পরিবর্তন।
তিনি আরও বলেন, খাত আমদানি করে আবারও বিদেশে রফতানির সঙ্গে ২০ থেকে ২২ জনের একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
মাদকের গডফাদাররা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতার বিষয়টিও পর্যালোচনার অনুরোধ করছি। জনবল সংকটের কারণে একজন আসামিকে রিমান্ডে এনে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক সময় আমরা শিকড় পর্যন্ত যেতে পারি না। এছাড়া বর্তমান মাদক আইনে সঙ্গে মাদক না থাকলে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না, সেক্ষেত্রে কথিত গডফাদারদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা কঠিন।
তবে নতুন মাদক আইনে বিষয়গুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। মাদক বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে আমাদের নূন্যতম দুর্বলতা নেই।
তালিকার অনেক মাদক বিক্রেতাই বর্তমানে জেলে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে জেলখানার মোট আসামির ৩৪ শতাংশই মাদক মামলার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মীদের অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছিল, এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ত্রের সঙ্গে জনবলের বিষয়টা জড়িত। সরকার যখন মনে করবে আমাদের অস্ত্র দরকার, তখনই দেবে। জনবল বাড়লে পরবর্তীতে আমরা আশা করতে পারবো।
অধিদফতরের কাউকে মাদক বিক্রেতার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কেউ যদি কোনো মাদক বিক্রির সঙ্গে নূন্যতম সংযোগও থাকে, তাহলে আমাদের জিরো টলারেন্স ভূমিকা থাকবে। মাদক অভিযানে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ঠিকঠাক নিয়ম ফলো না করায় অনেককে আমরা নিজেরা গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছি।
বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অনুমোদনের বাইরে বাড়তি রোগী ভর্তি করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতি ১০ জন রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আমরা গবেষণা করে দেখেছি একজন ডাক্তার ৩০ মাদকাসক্ত রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন। তাই নতুন বিধিমালায় ৩০ জন রোগীর জন্য একজন ডাক্তারের নিয়মটি সংযুক্ত করা হবে।
চলতি মাসের ৪ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠেয় উন্নয়ন মেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, সেখানে অধিদফতরের সব সেবা মিলবে। মেলা উপলক্ষে প্রতি জেলায় মাদকবিরোধী প্রচারণা চলবে। এছাড়াও ঢাকার স্টলে মাদক নিরাময়ের পরামর্শ, লাইসেন্সের আবেদনের মতো সেবা দেওয়া হবে। যে কেউ স্টল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য ও সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
মাদক নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের সাফল্য তুলে ধরে মহাপরিচালক বলেন, অধিদফতর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮৯৭টি অভিযান চালিয়ে নয় হাজার ৯৩৪ জন মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে আট হাজার ৪০৬টি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়াও গত ২০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পরিচালিত বিশেষ অভিযানে সারাদেশে নিহত ৬০৩ জন আসামির বিরুদ্ধে ৫৫৯টি মামলা দেয় অধিদফতর। এসময় ৫৯ হাজার ৫০৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ডিজি বলেন, কক্সবাজারে পরিচালিত টাস্কফোর্সের বিশেষ অভিযানে টেকনাফ রুট সিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য এলাকা দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে। যারা চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা আমরা তাদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছি। বিক্রেতারা পালিয়ে গেলেও তাদের মানসিক ও সামাজিকভাবে চাপে রাখা হচ্ছে। যারা মাদক বিক্রি করবে তাদের স্বস্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮/আপডেট ১৬৪৮ ঘণ্টা
পিএম/এএ/টিএ