ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শরণখোলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
শরণখোলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি শরণখোলায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ছবি-বাংলানিউজ

বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক পরিবার। 

এর মধ্যে ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশেও। সব মিলিয়ে চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে স্থানীয় মানুষের।

 

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগে মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সকালে শরণখোলা উপজেলার বগী এলাকায় বাঁধের প্রায় দুইশ’ মিটার ভেঙ্গে নদীতে মিলিয়ে যায়। এতে উপজেলার বগী ও চালিতাবুনিয়া গ্রামের অধিকাংশ জায়গা প্লাবিত হয়ে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ দুই গ্রামের পুকুর, মৎস্য ঘের ও নালায় পানি ঢুকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানি উঠেছে কাঁচা ঘরবাড়িতে। ফসলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। কিন্তু ভাঙ্গনের তিনদিন পরেও বাঁধ সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

বগি এলাকার আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে যায়। পরে প্রত্যেক জোয়ারেই পানি ঢুকে এলাকার সবকিছু প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে আমরা খুবই কষ্টে আছি।

পানিবন্দি নাছিম বেগম বলেন, রান্না ঘর, শোবার ঘর, সব জায়গায় পানি। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে দিন কাটছে আমাদের। কিন্তু দেখার কেউ নেই।  

ইউএনও লিংকন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য বালুর বস্তাসহ প্রয়োজনীয় মালপত্র ঘটনাস্থলে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, দুই-একদিনের মধ্যে লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধ হবে। এছাড়া দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ পানি ঢুকে ফসলের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করছে। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাউথখালী ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, গত তিনদিন আগে পানির চাপে দুইশ’ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর বাঁধের আরও কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। বাঁধের ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ এলাকা মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।  

বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিইআইপি)-এর ডেপুটি টিম লিডার মো. হাবিবুর রহমান জানান, বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মাণাধীন বাঁধটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পের আওতাধীন। এখানে অনেক কারিগরি বিষয় রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী এ প্রকল্পে মাঝে মধ্যে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে আমরা বাঁধের যেসব অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব অংশে বালুর বস্তা ও স্কেভেটর দিয়ে মাটি ফেলে পানি বন্ধ করার চেষ্টা করছি। তবে জোয়ারের পানির প্রবাহ বেশি থাকার কারণে পানি বন্ধের কাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।  

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বলেশ্বর নদীর পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ওই বেড়িবাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিইআইপি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সিইআইপি।  

বাংলাদেশ  সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।