বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এমপি মনিরুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা যশোরের চৌগাছা উপজেলার এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তিনি প্রধান অতিথি। শ্রেণিকক্ষে হওয়া অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
তারপর ‘ধন, ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা...’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফুল হাতে মাথা নত করে ছাত্রীরা অতিথিদের সামনে উঠছে আর বসছে। পাশ থেকে এক শিক্ষককে ছাত্রীদের এমন কিছু করার বিষয়ে নির্দেশনাও দিতে দেখা যায়। তবে ছাত্রীদের সবার মুখ ছিলো মলিন। ভিডিওতেই স্পষ্ট, জোর করে তাদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে।
পরে স্যোশাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনার ঝড়। টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো’র আলোচনায় উঠে আসে অমানবিক এ বিষয়টি।
অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের দিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে এমপিকে বরণ করা দোষের কিছু না। কিন্তু অতিথির সামনে দাঁড় করিয়ে, ফুলের মালা আর জোড়হাত করে কোমলমতি ছাত্রীদের এভাবে উঠবস করানোটা অবশ্যই অমানবিক।
নাজমুল হোসেন সোহেল রাজ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমার রাগটা ওই শিক্ষকদের ওপর বেশি, তারপর তথাকথিত এমপির ওপর। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ রকম মালা নেওয়া দৃষ্টিকটু দেখায়। ’
মিজানুর রহমান ফেসবুকে লিখেন, ‘কোথায় এই স্কুল? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই। এভাবে ফুল দিয়ে বরণ করতে তো কোথাও দেখিনি! বারবার হাঁটু গেড়ে ওঠবস করে ফুল দেওয়া এটা কিসের নিয়ম? শিক্ষক ও স্থানীয়রা আবার এটি উপভোগও করছেন! ধিক্কার সবার প্রতি!’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি শেয়ার করার কয়েক ঘণ্টাতেই ভিডিওটি দেড় লাখের বেশি দেখা হয়েছে। জানা গেছে, প্রথমে এমপি মনিরুল ইসলামই এই ভিডিও তার ফেসবুক টাইমলাইনে আপলোড করেন। সমালোচনার এক পর্যায়ে তিনি তা ডিলেট করে দেন বলে দাবি করেছেন নাজমুল নামে এক ব্যক্তি।
এ বিষয়ে এমপি মনিরুল ইসলাম মনিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।
এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের এমপি মনিরুলের অডিও রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র কলস প্রতীকের প্রার্থী সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহীন-উল কবীর শেখ আফিল উদ্দিনের ওই বক্তব্যের সিডিসহ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন।
পরে এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মনির নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। ফলে নির্বাচিত হয়েও গেজেটে এমপি মনিরের নাম বাদ পড়ায় শুরুতেই সারাদেশে আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী। পরে ক্ষমা প্রার্থনা করে নির্বাচন কমিশন থেকে রক্ষা পান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৮
ইউজি/এমএ