বাকিদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার ভোর ৪টার দিকে এলাকার ১১০/এ-১ নম্বর ৩ তলা বাসার নিচ তলায় এই আগুনের ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসাধীন দগ্ধরা হলেন- সুফিয়া বেগম (৫০) ও তার মেয়ে আফরোজা আক্তার পূর্ণিমা (৩০), পূর্ণিমার ছেলে সাগর (১২), সুফিয়ার আজিজুলের বোন আঞ্জু আরা (২৫) ও তার স্বামী ডাবলু মোল্লা (৩৩), তাদের ছেলে আব্দুল্লাহ সৌরভ (৫)।
দগ্ধ আঞ্জু আরা বাংলানিউজকে বলেন, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোরে হঠাৎ দেখি বাসার ভেতর আগুন। পাশের রুম থেকে চিৎকার শুনে আমার স্বামী ডাবলু মোল্লা রুমের দরজা খুলতেই হাওয়ার মতো আগুন এসে শরীরে লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই সারা শরীর পুড়ে যায়। পরে আমি বিছানা থেকে উঠে আমার ছেলে আব্দুল্লাহকে কোলে নিয়ে দরজা দিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। তবে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে গেলে আমি ও আমার ছেলের শরীরেও আগুন লেগে যায়। আর বেরুতে পারিনি। পরে আমার স্বামী বাথরুমে গিয়ে পানির ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। পরে আমাদেরও পানির কল ছেড়ে তার নিচে রাখে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে প্রথমে আমার স্বামীকে বাইরে বের করেন। এরপর আমাকে ও আমার ছেলেকে বের করেন। এর মধ্যেই আমাদের রুমের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মুসলিমা ও ফুফাতো বোন আফরোজা স্থানীয় কে এম গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার স্বামী ডাবলু অটোরিকশাচালক। স্থানীয় ময়নারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে আব্দুল্লাহ। আর ভাই আজিজুল একটি মাছের খামারে কাজ করেন। আজিজুল ও মুসলিমা গত একবছর আগে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করে।
গতমাসের প্রথমেই তারা ওই বাসার নিচ তলার পুরো একটি ফ্ল্যাট নেন। সেখানকার তিনটি রুমেই থাকতেন তারা। এরআগেও একই বাসার বিভিন্ন তলায় থাকতেন তারা।
দগ্ধ আঞ্জু জানান, প্রতিদিন ভোরে সবার আগেই মুসলিমা রান্না করেন। তার রান্না শেষে আমরা রান্না করি। আজ ভোরও রান্না করতে উঠেছিল মুসলিমা। আর রান্না করার জন্য চুলায় আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাসার ভেতর গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল বলে আঞ্জু আরাকে জানিয়েছিল তার ফুফু সুফিয়া। বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে বলা হয়েছে। কিন্তু বাড়িওয়ালা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ভোর ৪টার দিকে আগুনের সংবাদ পেয়ে তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নিভিয়ে দগ্ধ আটজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দু’জন শিশু, চারজন নারী ও দু’জন পুরুষ।
ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল বাংলানিউজকে জানান, দগ্ধ আটজনের মধ্যে আজিজুল ৯৯ শতাংশ ও মুসলিমার ৯৮ শতাংশ পোড়া নিয়ে মারা যান।
উত্তরখানে দগ্ধের ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা ও আহত দগ্ধদের ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। সন্ধ্যায় বার্ন ইউনিটে এসে স্বজনরা টাকা বুঝে পান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
এজেডেএস/এপি/এএটি