ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইজতেমার তারিখ ঘোষণা নির্বাচনের পর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৮
ইজতেমার তারিখ ঘোষণা নির্বাচনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর যে কোনো দিন বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার তারিখ কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না, ইজতেমার তারিখ শুধু শিফট হচ্ছে, নির্বাচনের পর যে কোনো সময়ে এটা হবে। একই সঙ্গে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও জানান তিনি।

 

শনিবার (০১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল একথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে দিল্লির মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তাবলিগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম এবং তাদের বিরোধী কওমিপন্থী মাওলানা জুবায়েরের পক্ষ থেকে তাবলিগের উপদেষ্টা মাওলানা আশরাফ আলী ও আবদুল কুদ্দুসসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত রয়েছেন।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা আগেও বলেছিলাম নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের ইজতেমা হবে না। আমরা সেটাকেই আবার রিপিট করেছি। নির্বাচন পর্যন্ত ইজতেমার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সভা কিংবা জোড় ইজতেমা কিংবা ইজতেমার জন্য সব ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে, এটা সারা দেশব্যাপী। নির্বাচনের পর ইজতেমার তারিখের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।  

তিনি বলেন, এখন থেকে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রশাসন সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখবে আমরা সেখানে কাউকে অ্যালাউ করব না। আজকে যে ঘটনা ঘটেছে তারা সবাই নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা হবে। ফৌজদারি মামলায় যেভাবে তদন্ত হয় সেভাবেই তদন্ত হবে। তদন্তে চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিদের আইনানুযায়ী বিচার হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টঙ্গীর মাঠ নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর আগে আমরা সভা করেছিলাম, সেই সভায় কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল যারা যারা সেই সভায় ছিলেন সেই সভার বেশিরভাগ সদস্যই আজকের সভায় ছিলেন।

বিভিন্ন কারণে অন্যান্য দেশ চাচ্ছে ইজতেমা বাংলাদেশ থেকে চলে যাক। এ বিবাদ সেটার কোনো অংশ কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না না, এটা কোনো অংশ হতে পারে না। আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, তাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে। আমরা চেষ্টা করছি, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই ভুল বোঝাবুঝি যাতে দূর হয় বা কমে যায়। সেটা তারা করবেন, তারাই একটা উপায় বের করে নেবেন। ইজতেমা অন্য জায়গায় চলে যাবে নাকি এ জায়গায় থাকবে সেই সিদ্ধান্ত যারা ইজতেমায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই নেবেন। আমরা চেষ্টা করব, যাতে সুন্দরভাবে ইজতেমাটি হয়।

সভায় অংশ নেওয়া কারওয়ান বাজার শাহী মসজিদের খতিব মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ইজতেমা বাংলাদেশে হবে এটা নিশ্চিত। নিজের মধ্যে আশা করি একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে। দুই পক্ষেও কেউ রাস্তায় নামার পক্ষে নয়, আজকে এটা কাকতালীয়ভাবে হয়ে গেছে। দু’পক্ষকে এক করার চেষ্টা চলছে। ভারতে একটি প্রতিনিধি দল অচিরেই যাবে।

কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিলের যুগ্ম-মহাসচিব ও তাবলিগের সাদ বিরোধীপন্থী মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমরা বৈঠকে আজকের ঘটনাটি বর্ণনা করেছি। ইজতেমার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছিল, অপরদিকে ওয়াসিফুল ইসলাম সাহেবের জোড় ইজতেমা ছিল ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। জোড় করার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ওনারা সারা দেশ থেকে লোক একত্রিত করে রড, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে গেট ভেঙে ব্যাপকভাবে মানুষের উপর আক্রমণ করে। শত শত মানুষ আহত করেছে। দু’এক দিনের মধ্যে আমরা প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রকাশ করব।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি প্রশাসন ও সরকারের মধ্যস্ততায় নির্বাচন পরবর্তী দ্রুততম সময়ে একটা স্থায়ী সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারবো।

এর আগে শনিবার সকালে টঙ্গীতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ইসমাইল মন্ডল (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। সকালে ছেলে জাহিদ হাসানের সঙ্গে তিনি টঙ্গী এসেছিলেন। টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের ১ নম্বর প্রবেশ ফটকে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কামারপাড়া থেকে একদল মুসল্লি লাঠিসোঠা হাতে ইজতেমা ময়দানের ১ নম্বর প্রবেশদ্বারে প্রতিপক্ষের অনুসারীদের ওপর হামলা চালান। মুহূর্তেও মধ্যে স্থানটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আধা ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দেন। জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা গত বুধবার রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের ভেতরে অবস্থান নেয়। তারা শুক্রবার সকালে ইজতেমা ময়দানে ঢোকার সব গেট বন্ধ করে দেয়। বাইরের সাধারণ মুসল্লিদেরও ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করতে দেয়া হয়নি। শনিবার সাদপন্থী মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৮
জিসিজি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।