ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চড়-থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে শিশু সিয়ামকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
চড়-থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে শিশু সিয়ামকে হত্যা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নিহত সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেনের ইটের টলিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মিঠু মিয়া (২৬)। সেই সুবাদে মিঠু তার মালিকের বাসাতেই থাকতেন। একদিন মিঠুর সঙ্গে হৃদয় নামে অপর এক শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এর সমাধান করতে মিঠুকে চড়-থাপ্পর ও বকাবকি করেন মালিক মোফাজ্জল।

আর এই কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে চড়-থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে মালিক মোফাজ্জলের শিশু সন্তান সিয়ামকে (৬) নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন মিঠু।

বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার গন্ধবপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিশু সিয়ামের অপহরণকারী ও খুনি মিঠুকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)।

শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, প্রায় ৪ মাস আগে আসামি মিঠু ভুক্তভোগী সিয়ামের বাবার ইটের টলিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। মিঠু মোফাজ্জলের বাসাতেই থাকতেন এবং খাওয়া-দাওয়া করতেন। কাজে যোগদানের ১৫/১৬ দিন পর অন্য এক শ্রমিক হৃদয়ের সঙ্গে মিঠুর ঝগড়া হয়। ওই ঘটনায় মিঠুকে চর-থাপ্পর ও গালাগালি করেন মোফাজ্জল।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিঠু তার মালিকের ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মোফাজ্জলের ছেলে সিয়ামকে রুপগঞ্জের কাঞ্চনব্রিজে ঘুরতে নিয়ে যান। সেখানে সন্ধ্যা নেমে এলে একপর্যায় ব্রিজের রেলিং থেকে ধাক্কা দিয়ে সিয়ামকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন। এরপর সেখান থেকে ঘাতক মিঠু পালিয়ে তার নিজ বাড়ি গন্ধবপুরে চলে যান।

আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশু সিয়াম নিখোঁজের ঘটনাটি ধীরে ধীরে আলোচিত হতে থাকে সে সময় মিঠু ও তার পরিবাবের সব সদস্যরা তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র চলে যান।  

তিনি বলেন, আটকের পর মিঠু এই হত্যার ঘটনা সম্পূর্ণ স্বীকার করেছেন। মিঠু জানান, মোফাজ্জল তাকে চড়-থাপ্পর ও গালাগালি করেছেন বলেই তার প্রতিশোধ নিতে শিশু সিয়ামকে ব্রিজ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন। তবে এখনও শিশু সিয়ামের মরদেহ পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সিয়ামের মা ফারজানা বলেন, বাসা থেকে মিঠু আমার সন্তাকে নিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা হয়, রাত হয়, কিন্তু সিয়াম আসে না। পরে আমি ও আমার স্বামী সিয়ামকে অনেক খোঁজাখুজি করি, কিন্তু কোথাও পাই না। পরে একদিন মিঠু ফোন করে বলে তোর ছেলেকে নদীতে ফেলে দিয়েছি। এরপর থানায় গিয়ে একটি অপহরণ মামলা করি।  

তিনি বলেন, যাকে আমরা খাইয়েছি, থাকার জায়গা দিয়েছি, সে আমার আদরের নিষ্পাপ শিশু সন্তানকে এমনভাবে হত্যা করেছে, আমি এর বিচার চাই।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জের বিরাব খালপাড়ের বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেনের ৬ বছরের শিশু সন্তান সিয়াম নিখোঁজ হয়। সিয়াম বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিলো।  

এদিকে, সিয়ামের বাবা মোফাজ্জলের শ্রমিক মিঠু ওইদিন থেকে পালিয়ে যান। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর সিয়ামের মা ফারজানা বাদী হয়ে পলাতক শ্রমিক মিঠু ও তার বাবা আনোয়ারসহ অজ্ঞাত দুই/তিনজনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৮
পিএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।